ড. ইউনূসের কারাদণ্ডের বিষয়ে যা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েচে আদালত। তার কারাদণ্ডের বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাই বাংলাদেশ সরকারকে এবিষয়ে ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমরাও তার বিরুদ্ধে মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ কী হবে, তা আগেই বলা হবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩ জানুয়ারি) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারাদণ্ডের বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন- ‘শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম প্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশের শ্রম আদালত যে কারাদণ্ড দিয়েছে সে বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাচ্ছি। বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা- এই দুই ক্ষেত্রে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ যে পর্যায়ে এসে ঠেকেছে সে বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপলব্ধি কী? বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং অসংখ্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার কর্মীরা একই ধরনের মামলায় অনেকটা একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, ক্ষেত্র বিশেষে অনেকের ক্ষেত্রে সেই দুর্দশার মাত্রাটা আরও খারাপ।’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারসহ মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা অবশ্যই রায়ের পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনাও দেখেছি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য উৎসাহিত করেছি এবং এই বিষয়ে পরবর্তী যেকোনও ঘটনা আমরা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখব।
পরে পৃথক প্রশ্নে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের শেষেই বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে নিজ দল থেকে ডামি প্রার্থী দাঁড় করাতে প্রকাশ্য নির্দেশনা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েছিল তা উপেক্ষা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কী এই ধরনের একটি ডামি নির্বাচনকে বৈধতা দেবে? যদি তা না হয় তাহলে এই ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বাইডেন প্রশাসন? গত সপ্তাহে বিবিসি তাদের এক রিপোর্টের শিরোনামে লিখেছে- বাংলাদেশের নির্বাচন ‘ওয়ান ওম্যান শো’তে পরিণত হয়েছে।’
জবাবে মিলার বলেন, আমার মনে হয়, আমি আগেই এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, কিন্তু এটি যেহেতু নতুন বছর তাই আমি আবারও এর উত্তর দেব। আমরা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। আমরা এটি বেশ কয়েকবার পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনগুলো খুব কাছ থেকে দেখব, তবে অবশ্যই নির্বাচনের প্রতিক্রিয়ায় আমরা কী পদক্ষেপ নিতে পারি বা নিতে পারি না সে সম্পর্কে আমি আগে থেকে কোনও কথা বলব না।
এসি//