ড. ইউনূসের মামলা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র
আমরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা অবশ্যই রায়ের পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনাও দেখেছি-এভাবেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিলেন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বুধবার ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারাদণ্ডের বিষয়ে একটি প্রশ্নে মার্কিন সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাব্কে সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী।
তার প্রশ্নটি ছিলো, ‘নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশের শ্রম আদালত শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যে কারাদণ্ড দিয়েছে সে বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাচ্ছি। বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা-এই দুই ক্ষেত্রে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ যে পর্যায়ে এসে ঠেকেছে তার ব্যাপারে স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপলব্ধি কী? বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং অসংখ্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার কর্মীরা একই ধরনের মামলায় অনেকটা একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, ক্ষেত্র বিশেষে অনেকের ক্ষেত্রে সেই দুর্দশার মাত্রাটা আরও খারাপ।’
বিএনপিপন্থী এই বাংলাদেশি সংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘মুহম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারসহ মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা অবশ্যই রায়ের পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনাও দেখেছি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য উৎসাহিত করেছি এবং এই বিষয়ে পরবর্তী যেকোনো ঘটনা আমরা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখব।’
ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপিপন্থী ওই বাংলাদেশি সাংবাদিক আসছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া জানতে চান।
মুশফিকুল ফজল আনসারীর প্রশ্নটি ছিল, ‘চলতি সপ্তাহের শেষের দিকেই বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে নিজ দল থেকে ডামি প্রার্থী দাঁড় করাতে প্রকাশ্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েছিল তা উপেক্ষা করা হয়েছে। এই ধরনের একটি ডামি নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্র কী বৈধতা দেবে? না দিলে এই ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বাইডেন প্রশাসন? গত সপ্তাহে বিবিসি তাদের এক রিপোর্টের শিরোনামে লিখেছে- বাংলাদেশের নির্বাচন ‘ওয়ান ওম্যান শো’তে পরিণত হয়েছে।’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমি আগেই এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তবে নতুন বছর হওয়ায় আমি আবারও এর উত্তর দেব। আমরা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। আমরা এটি বেশ কয়েকবার পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছি। নির্বাচনগুলো আমরা খুব কাছ থেকে দেখবো। তবে নির্বাচনের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিতে পারে বা নিতে পারে না সে সম্পর্কে অবশ্যই আমি আগে থেকে কোনো কথা বলব না।’