দেশজুড়ে

আগুনে পুড়ে মৃত্যুর আগে যা বলেছিলেন ট্রেনের সেই যাত্রী

রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় আগুনে জ্বলছিল বেনাপোল এক্সপ্রেস। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) তখন দিবাগত রাত ৯টা। আগুন লাগার পরপরই ট্রেনের ভেতর থাকা যাত্রীদের কণ্ঠে ভেসে আসে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। তাদের গণবিদারী চিৎকারে ভারী হয়ে আসে ওই এলাকার আকাশ-বাতাস। অধিকাংশ যাত্রী শেষ পর্যন্ত বেরোতে পারলেও পুড়ে অঙ্গার হন চারজন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যুর দৃশ্য ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। আগুনের মধ্যে জানালায় শরীরের একাংশ বাইরে থাকা অবস্থায় পুড়ে অঙ্গার হন ওই ব্যক্তি। এমন অবস্থা দেখে কেউ কেউ তাকে উদ্ধারের চেষ্টায় এগিয়ে এলেও তিনি বের হওয়া ইচ্ছা পোষণ করেননি। স্ত্রী ও সন্তান পুড়ে গেছে জানিয়ে ওই যাত্রী বলেছিলেন, ‘এখন বের হয়ে কী হবে?’

গোপীবাগ এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা সেই ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘ট্রেনে আগুন লাগার খবর পেয়ে বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসি। এসে দেখি ‘চ’ বগিতে একজন লোক জানালায় আটকে আছে। আমি তাকে ধরে বের করতে চাইছিলাম। কিন্তু ওই যাত্রী বলেছিলেন আগুনে স্ত্রী-সন্তান পুড়ে গেছে। এখন বের হয়ে কী হবে। থাইকাই বা কী লাভ’।

মাসুদ রানা বলেন, ‘পুরো বগিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। গরমে ট্রেনটির কিছু ধরা যাচ্ছিল না। তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে তাকে টেনে নামানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঘাড়ের ওপর জানালা নামায় বের করতে পারি নাই। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভালেও ততক্ষণে মারা যান তিনি।’

গতকাল বেনাপোল থেকে যাত্রীবোঝাই করে কমলাপুরে আসছিল বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। গন্তব্যস্থল পৌঁছার কিছু সময় আগে রাত নয়টার দিকে ট্রেনটিতে আগুন দেয়া হয়। এতে বাধ্য হলে গোপিবাগ এলাকায় ট্রেনটি থামাতে বাধ্য হন চালক। আগুনে ট্রেনটির চারটি বগি পুড়ে যায়। পরে বগিগুলো থেকে চারটি মরদেহ উদ্ধার করার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে তিনজনই একই পরিবারের।

ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় আরও কয়েকজন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসিব নামে ৩০ বছর বয়সী এক যুবককে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ৮ শতাংশ ঝলসে গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন