আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ফ্রি ফায়ারে আসক্ত কিশোর এখন শিকল বন্ধী

পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মত অনলাইন গেইমে আসক্ত হওয়ায় এক কিশোরকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। পরিবারের কাছে কারণ জানতে চাওয়া তারা বলেন, এটা না করলে কিশোরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না!

ঘটনাটি ঘটেছে যশোরে। শিকোল দিয়ে বেঁধে রাখা কিশোরের বয়স মাত্র ১৭। তার বাবা একজন কৃষক। জেলার শার্শা উপজেলার সৈয়দপাড়ায় তাদের বাড়ি।

কিশোরের বাবা জানান, কোভিড মহামারী শুরুর বছর এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো তার ছেলে। করোনার কারণে স্কুল যখন বন্ধ হয়ে গেলো, তখনই ধরল মোবাইলে অনলাইন গেইমের নেশা। পাবজি, ফ্রি ফায়ার, এইসব খেলার নেশা হয়ে গেলো। মানা করলে শুনতো না। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে  সারাদিনই খেলতো। অনেক বকাঝকা করেও খেলা ছাড়াতে পারিনি। এখন আর সে নিয়ন্ত্রণে নাই।’

আসক্তি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। সামলাতে না পেরে তাকে বেঁধে রাখা হয়-যোগ করেন কিশোরের বাবা। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, রবার দিয়ে হাত এবং পা শেকল দিয়ে ঘরের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়েছে কিশোরকে। সে বললো, বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে শুরু করেছিলো, এখন না খেললে ভালো লাগে না।

কিশোরের বোন জানান, মহামারীর সময় তিনি শ্বশুড়বাড়িতে ছিলেন। বাবা-মা নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। স্কুলও বন্ধ ছিলো। তখন বসে বসে গেইম খেলা শুরু করে তার ভাই।  ‘খেলার নেশায় সে পাগলের মত হয়ে গেছে। চিকিৎসা করানো হচ্ছে। তার পরও আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’

বুধবার ছেলেকে নিয়ে যশোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের কাছে যান পরিবারের সদস্যরা। আমিনুল বলেন, ‘সময়মত খাওয়া-দাওয়া না করা আর অতিরিক্ত রাত জাগায় এ রকম হয়েছে। ওকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরাতে হবে।’

এ ধরনের রোগীকে সুস্থ করতে সঙ্গ দেওয়া প্রয়োজন বলে জানালেন একই হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ জাতীয় রোগীর কাউন্সেলিং বেশি প্রয়োজন। মোবাইল ফোন বাদ দিয়ে তাকে সঙ্গ দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে।’

গ্রামের অনেক কিশোর-তরুণ মোবাইল ফোনে গেইমে আসক্ত হয়ে পড়ছে জানিয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কিশোরের বাবা। তিনি বলেন, ‘আদরের সন্তানের হাতে মোবাইল ফোন দিয়েন না। খোঁজ নিয়ে দেখেন সে কী করে। দেরি হয়ে গেলে আমার ছেলের মত হবে।’

হাসিব  মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন