জাতীয়

‘ব্যবসায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি’

দেশে ব্যবসায় সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা, অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের ব্যবসার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে বিগত সময়ের চেয়ে অবকাঠামো, ঋণসহায়তা প্রাপ্তি এবং অস্থায়ী নীতি সহায়তায় বিষয়ে সামান্য কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২৩: উদ্যোক্তা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে উঠে এসেছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে। আগে যেমন ঋণপ্রাপ্তি অবকাঠামোর মতো বিষয় নিয়ে তাদের অধিক চিন্তিত থাকতে হতো এখন তাদেরকে বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি, রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এতে কিছু ব্যবসায়ীদের সক্ষমতাও বেড়েছে, তবে মোটাদাগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা সমস্যার মধ্যে পড়ছেন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, তবে দুর্নীতিসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলোর কারণে সার্বিকভাবে কিন্তু আমাদের গত বছরের উৎপাদন, তার আগের বছরের উৎপাদনের তুলনায় অনেকটা কমেছে। গত বছর ব্যবসায়ীরা ভালো করেছেন, এমন সংখ্যা খুবই কম। ডলার সংকটে অনেকে কাঁচামাল কিনতে পারেননি। অনেকে আমদানি করতে পারেননি, বাজারে সরবরাহ করতে পারেননি।

মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বারবার বললেও সেটা যথাযথভাবে আমলে নেয়নি সরকার। বৈশ্বিকভাবেই জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে এলএনজি আমদানি বড় সংকট তৈরি করেছে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত জ্বালানি সংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রাধান্য দেয়া।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের সেবা, শিল্প, কৃষি, উৎপাদন খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭১ জন গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে করা এ মতামত জরিপে অংশ নেন।

জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, শতভাগ বড় ব্যবসায়ীর জন্য প্রধান সমস্যা দুর্নীতি, মাঝারি ৬১ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে সমস্যা মনে করছেন এবং ৫৬ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন। আবার ছোট ছোট সরকারি সেবার ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমস্যায় পড়ছেন, যেখানে বড় ব্যবসায়ীদের সমস্যা এসব ক্ষেত্রে কিছুটা কম।

এদিকে গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা বড় ব্যবসায়ীদের বেশি প্রভাবিত করেছে। ৬২ শতাংশ বড় ব্যবসায়ীদের জন্য এ বিষয়টি প্রতিবন্ধকতা ছিল, যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিল ৩৮ শতাংশ। রিজার্ভের কারণে বড় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে এ সময়। ৭১ জন বড় ব্যবসায়ীর মধ্যে ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ২৯.৫৮ শতাংশ, মঝারি ব্যবসায়ী ৩৫.২১ ও বড় ব্যবসায়ী ৩৫. ২১ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ব্যবসায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে জরিপে বলা হয়েছে, ৬৬.২০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন আগামী দুই বছর জ্বালানি সংকটে ভুগবেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন ব্যাংকিং খাতে নজরদারি ও তদারকির অভাব রয়েছে। ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন, ডলার সংকটের কারণে তারা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না।

এএম/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন