আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

গরমে সুস্থ ও ঝলমলে চুল পাওয়ার সহজপাঠ

এপ্রিল মাস পার হতে না হতেই সূর্যের তেজ একেবারে তুঙ্গে! সূর্যের তেজ এখন আরও বেশি। বাইরে বের হলে পাঁচ মিনিটেই চুলের দফারফা। অনেকেই জানেন না, রোদ থেকে শুধুমাত্র যে ত্বকেরই ক্ষতি হয় তা নয়। ইউ-ভি রে চুলের জন্যও একইরকম ক্ষতিকারক। আর পাশাপাশি ঘামে ভেজা স্ক্যাল্প থেকে নানা ধরনের সমস্যাও অবধারিত। 

একদিকে রুক্ষ, নির্জীব চুল, অন্যঅদিকে অতিরিক্ত তেলতেলে স্ক্যাল্প থেকেও তৈরি হয় নানা সমস্যা। সব মিলিয়ে চুলের সমস্যায় রীতিমতো মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। সমস্যা যখন রয়েছে, সমাধানও নিশ্চয়ই রয়েছে। রোজকার অভ্যাসে সামান্য কিছু পরিবর্তন এবং একটু বেশি যত্ন নিলেই চুল থাকবে নিজের আয়ত্তে। গরমকালে পরিষ্কার, নরম এবং চকচকে চুল পেতে আজই শুরু করুন সঠিক যত্ন।

স্ক্যাল্প রাখুন পরিষ্কার

অনেকেই বলেন শ্যাম্পুতে থাকা নানা ধরনের কেমিক্যাল চুল শুষ্ক করে দেয়, চুল রুক্ষ হয়ে যায় ইত্যাদি। তবে প্রতিদিন শ্যাম্পু না করলে সমস্যা আরও বাড়বে। যাদের প্রতিদিন বাইরে বেরতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে রাস্তার ধোঁয়া, ধুলো স্ক্যাল্পে জমা হয়ে চুলের গোড়া বন্ধ করে দেয়। ফলে চুলের বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়। এমনকি চুল ও স্ক্যাল্পের যাবতীয় সমস্যাও দেখা দেয়। 

শুধু বাইরে বেরলেই যে স্ক্যাল্পে ময়লা জমে তা নয়। বাড়িতে থাকলেও ঘাম জমেও স্ক্যাল্পের ক্ষতি হতে পারে। তবে এটাও ঠিক যে, প্রতিদিন অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা ঠিক নয়। প্রতিদিন শ্যাম্পু করার ক্ষেত্রে মাইল্ড বা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। সরাসরি শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে না লাগিয়ে, পানি দিয়ে পাতলা করে নিতে হবে। এতে চুল রুক্ষ হবে না। অথবা রিঠা ভেজানো পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করা যেতে পারে। ফলে চুল পরাও কমবে এবং নিয়মিত ব্যবহারে চুল হয়ে উঠবে ঘন এবং প্রাণবন্ত।

হেয়ার কন্ডিশনিং

এ সময় চুলে অবশ্যই কন্ডিশনিং করতে হবে। অনেকেই সময়ের অভাবে প্রতিবার কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না। এতে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। বিশেষত গরমকালের সূর্যের প্রখর রোদে, চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতাও নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন শ্যাম্পুর পাশাপাশি কন্ডিশনিংও গুরুত্বপূর্ণ। চটজলদি কন্ডিশনিংয়ের ক্ষেত্রে কেমিক্যালযুক্ত কন্ডিশনারই আমাদের ভরসা। তবে সপ্তাহে একদিন বাড়িতে বানানো কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু করার পর ভিজে চুলে, দু’চামচ মধু এবং এক টেবলচামচ নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। আধঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। অথবা অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে চুল ধুয়ে নিন। এতে রুক্ষতা দূর হবে, চুল হয়ে উঠবে নরম।

রোদ থেকে সুরক্ষা পেতে

গরমকালে সূর্যের প্রখর রোদ থেকে চুলকে বাঁচানো খুব কঠিন। খুব বেশিক্ষণ স্কার্ফ বা টুপি পরে থাকলেও ঘামে স্ক্যাল্প ভিজে নানা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আলাদা করে যত্ন নেয়া প্রয়োজন। এখন বহু লিভ-ইন কন্ডিশনার বা সিরাম বাজারে পাওয়া যায়, যা ইউ-ভি প্রোটেকশন যুক্ত। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। অথবা একটা ছোট্ট টিপস ট্রাই করতে পারেন। শরীরে সানস্ক্রিন মাখা হয়ে গেলে, একবার ওই হাত চুলের ওপর বুলিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন হাতে আলাদা করে সানস্ক্রিন না থাকে। এতেও চুলের ওপরের স্তরে একটি হালকা আস্তরণ পড়ে, যা রোদ থেকে চুলকে রক্ষা করে। চুল লালচে হয়ে যাওয়া আটকায়।

ঘরোয়া সিরাম

ইউ-ভি প্রোটেকশন যুক্ত হেয়ার সিরাম বাজারে না পেলে, বাড়িতে হাতের কাছে এ হেয়ার মিস্টটি রাখতে পারেন। বানানোও খুব সহজ। উপকরণ হিসেবে লাগবে পানি, অ্যালোভেরা জেল এবং অ্যাভোকাডো তেল। সমপরিমাণে তিনটি উপকরণ মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। দরকার পড়লে, চুলে স্প্রে করে নিন। চুল রোদ থেকে রক্ষাও পাবে, এবং পুষ্টিও পাবে।

হট অয়েল ট্রিটমেন্ট

চুলকে গভীরভাবে নারিশ করতে হট অয়েল মাসাজের কোনও বিকল্প হয় না। আর যেহেতু এ সময়, প্রতিদিন শ্যাম্পু করা প্রয়োজন, তাই তেল না লাগালে, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই একদিন অন্তর, রাতে অথবা শ্যাম্পু করার এক ঘন্টা আগে মাথায় তেল মাসাজ করুন। তবে সপ্তাহে একদিন ডিপ নারিশমেন্ট প্রয়োজন। নারকেল, অ্যাভোকাডো, অলিভ, আমন্ড ইত্যাদি তেল খুব সহজেই চুলোর গোড়ায় মিশে যায়। তাই এ তেলগুলো চুলের জন্য ভাল। চাইলে সবগুলো একসাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। অল্প গরম করে পুরো চুলে, ডগায়, স্ক্যাল্পে ভালভাবে মাসাজ করে নিন। এরপর গরম পানিতে তোয়ালে ডুবিয়ে, মাথায় জড়িয়ে রাখুন। কয়েকবার এভাবে করুন। এতে তেল চুলের ভিতর অবধি যাবে। পরদিন স্বাভাবিকভাবে শ্যাম্পু করে নিন।

চুল অনুযায়ী হেয়ার প্যাক

গরমকালে রোদ থেকে চুলকে বাঁচাতে প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্নের। নানা ধরনের হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তেলে লেবু, ক্যামোমাইল, ল্যাভেন্ডার, রোজমেরির মতো হার্ব মিশিয়ে, ফুটিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো প্রাকৃতিক উপাদান এবং রোদ থেকে হওয়া ক্ষতির হাত থেকে চুলকে বাঁচাতেও সাহায্য করবে। ঘরোয়া এসব প্যাক রাতারাতি ফল না দিলেও, কেমিক্যালযুক্ত প্রডাক্টের থেকে অনেক ভাল। 

ইউ-ভি রে থেকে চুলকে বাঁচাতে এ হেয়ার প্যাকগুলো ব্যবহার করতে পারেন-

১/৪ কাপ মধু নিয়ে হালকা গরম করে, এতে ১/৪ কাপ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণ একটু ঠান্ডা হলে, আঙুলের সাহায্যে পুরো চুল এবং স্ক্যাল্পে লাগান। এবার গরম পানিতে তোয়ালে ডুবিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন। আধঘণ্টা রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। অলিভ অয়েলের পরিবর্তে নারকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন।

দু’টো ডিমের কুসুম এবং ২ টেবলচামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। পুরো চুলে লাগিয়ে ৪-৫ মিনিট মাসাজ করুন। শাওয়ার ক্যাপ পরে আধঘণ্টা রেখে দিন। এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন।

একটা পুরো পাতিলেবুর রস, ২ টো ডিমের কুসুম, একটা ডিমের সাদা এবং ১ টেবলচামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। ১০-২০ মিনিট রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

গরমের জন্য সবচেয়ে ভালো সামারকুল হেয়ার প্যাক হল টকদই এবং আমন্ড অয়েলের মিশ্রণ। টকদই ড্যানড্রফ কমাবে, চুলকে নরমও করবে। আধকাপ টকদই, ২ টেবলচামচ আমন্ড অয়েল এবং এক টেবলচামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। ১-২ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন।

গরমকালে চুলের বিভিন্ন সমস্যাগুলোর মধ্যে নির্জীব এবং জেল্লাহীন চুল অন্যতম প্রধান। এ হেয়ার প্যাকটি চুলকে শাইনি করতে এবং চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে অব্যর্থ- এককাপ নারকেল তেল, আধকাপ লেবুর রস, ৩ টেবলচামচ শুকনো জবাফুলের গুঁড়ো এবং ২৫০ মিলি বিয়ার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। পুরো চুল এবং স্ক্যাল্পে ভালভাবে এ প্যাক লাগিয়ে ২৫-৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। রুক্ষতাও থাকবে না, আর চুলও হয়ে উঠবে নরম, কোমল এবং চকচকে।

হেয়ার স্টাইল

গরমে একেই ঘামের যন্ত্রণায় অস্বস্তির শেষ থাকে না। তার ওপর যদি কাঁধে, ঘাড়ে এলোমেলো চুল এসে পরে, তবে আর দেখতে হবে না! এছাড়া এতে ধুলো-ময়লাও বেশি জমবে। তাছাড়া, চুল খুলে রাখলে, রোদের তাপে রুক্ষ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই সবদিক ভেবে, চুল বেধে রাখাই শ্রেয়। এতে চুল সামলাতেও সুবিধে হবে। খুব টেনে বা টাইট করে বাধবেন না। কারণ এমনিতেই ঘামে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। এর উপর টান পড়লে চুল পরা বেড়ে যাবে। নানা ধরনের বিনুনি, পনিটেল বা আপডু ট্রাই করতে পারেন। ফ্রেঞ্চ ব্রেড, ফিশটেল ব্রেড, লুপ পনিটেল, হাফ আপডু, মেসি বান, ইনভার্টেড পনিটেল, সামুরাই বান ইত্যাদি এখন ভীষণভাবে ইন। চুল মাঝারি বা লম্বা হলে এগুলো ট্রাই করতে পারেন। তবে যদি চুল ছোট করতে চান, তবে এ-লাইন বব, ব্লান্ট বব, পিক্সি কাট ভাল অপশন।                                                       

সামারকুল টিপস

রোদে বেরলে মাথায় স্কার্ফ, হ্যাট বা ছাতা ব্যবহার করুন। সুতির স্কার্ফ ব্যবহার করবেন। খুব টাইট কিছু মাথায় না লাগানোই ভাল।

এমনিতেই রোদে বেরলে চুল তাপের সংস্পর্শে থাকবে। তাই এইসময় বেশি হিটিং টুল ব্যবহার করবেন না। এতে চুল লালচে হয়ে যাবে। রুক্ষতাও বেড়ে যাবে। তবে একান্তই প্রয়োজন পড়লে, হিট প্রোটেকট্যান্ট ব্যবহার করে, তবেই হিটিং টুলস ব্যবহার করবেন। ব্লো-ড্রায়ারের হিট সেটিংসও রাখুন একেবারে লো’তে।

গরমে চুলকে ফ্রেশ রাখতে এবং চকচকে করে তুলতে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
বড় দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান।

এসময় ঘামের মাধ্যমে শরীরের অনেক জল এবং মিনারেলস বেড়িয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়াও প্রয়োজন। এতে চুল ভাল থাকবে।

চুল ভাল রাখতে ডায়েটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর তাই টাটকা ফল, সবজি, বিনস রাখুন ডায়েটে।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন