তথ্য-প্রযুক্তি

সি সি ক্যামেরার কাজ করবে ওয়াইফাই রাউটার

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক অভাবনীয় প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। যেখানে সি সি ক্যামেরা ব্যবহার না করেও দুটি সাধারণ ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করেই নজর রাখা যাবে কারও ওপর। ওয়াইফাই সিগন্যাল ব্যবহার করে দেয়ালের ওপারের কোনো মানুষের ত্রিমাত্রিক ছবি ও দেহভঙ্গি তৈরি করার এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। কীভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করে তা নতুন এক গবেষণাপত্রে তুলে ধরেছেন গবেষকেরা।

গবেষকেরা ডেন্সপোজ নামের একটি ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করে ওয়াইফাই সংকেত থেকে ইউভি (আলট্রা ভায়োলেট) স্থানাঙ্ক তৈরি করেছেন। একটি ত্রিমাত্রিক মডেল থেকে যেভাবে কম্পিউটারে দ্বিমাত্রিক ছবির ম্যাপিং করা হয় এটিও তেমন।

ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডন, ফেসবুক এআই এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা এই ডেন্সপোজ প্রযুক্তি তৈরি করেছেন।

ডেন্সপোজ প্রযুক্তির বিষয়ে সর্বপ্রথম কানাডা–যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ভাইস প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ভাইস বলে, প্রযুক্তিটি দামি আরজিবি ক্যামেরা, এলআইডিএআর (লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং) ও র‍্যাডারের সহায়তা ছাড়াই সাধারণ ও সস্তা ওয়াইফাই অ্যানটেনাকে ওয়ানডি বা একমাত্রিক সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন বস্তুর আকার–আকৃতি ও দেহভঙ্গির ম্যাপিং করা যায়।

এ ছাড়া ঘরের মধ্যে কোনো বস্তুকে সঠিকভাবে শনাক্ত করাসহ এই প্রযুক্তি কোনো কক্ষের মধ্যে মানুষ রয়েছে কি না তা চিহ্নিত করতে পারে এবং সেই সঙ্গে বস্তুর বা মানুষের দেহভঙ্গিও শনাক্ত করতে পারে।

ওয়াইফাই-রাউটার

এ প্রযুক্তির আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অত্যন্ত কম আলোতেও বস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম। যেখানে দামি ক্যামেরাতেও এমন পরিবেশে ছবি তোলা সম্ভব হয় না।

গবেষক জিয়াকি গেং, ডং হুয়াং এবং ফার্নান্দো দে লা টরে তাদের গবেষণাপত্রে ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাদের মডেল ওয়াইফাই সংকেতকে একমাত্র ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করে একাধিক বস্তুর জটিল অঙ্গভঙ্গির ধারণাচিত্র তৈরি করা যায়। এই প্রযুক্তি কম খরচে, বড় পরিসরে ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করতে পারে এবং মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও রক্ষা করে।

গবেষকেরা বলেন, ওয়াইফাই সিগন্যালের মাধ্যমে এই শনাক্তকরণ প্রযুক্তি হোম হেলথ কেয়ারে (গৃহ স্বাস্থ্য সেবা) ব্যবহার করা যাবে, যেখানে রোগী সার্বক্ষণিক ক্যামেরা বা ট্র্যাকিং ডিভাইসের পর্যবেক্ষণে থাকতে আপত্তি করেন।

কম আলো বা দেয়ালের মতো কোনো বাধা ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। সেই সঙ্গে এই প্রযুক্তি স্থাপন করতে খরচও অনেক কম হয়। এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছিল দুটি টিপি লিংক ওয়াইফাই রাউটার, যেগুলোর প্রতিটির দাম মাত্র ৩০ ডলার। অপরদিকে প্রচলিত এলআইডিআরের দাম ৭০০ ডলার।

গবেষকেরা আরও বলেছেন, মানুষের অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য আরজিবি মডেলের পরিবর্তে ওয়াইফাই সংকেত বিকল্প হিসেবে সর্বজনীনভাবে ব্যবহার করা যাবে। অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ওয়াইফাইভিত্তিক সমাধানে আলো ও কঠিন বাধার মতো বিষয়গুলোর সামান্য প্রভাবই থাকে। এ ছাড়া এই প্রযুক্তি ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষা করে ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো যৌক্তিক মূল্যে কেনা যায়। উন্নয়নশীল বেশির ভাগ দেশের বাড়িতে ওয়াইফাই রাউটার রয়েছে এবং এই প্রযুক্তি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা প্রবীণদের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করা যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন