দেশজুড়ে

কোটি টাকা নিয়ে উধাও এজেন্ট, মানসিক চাপে সেলস ম্যানেজারের আত্মহত্যা

নরসিংদীর রায়পুরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের একটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় তালা মেরে গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন উধাও হয়েছেন। এ ঘটনায় ওই এরিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম (৪৫) বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন। এদিকে খবর পেয়ে ব্যাংকিং কার্যালয়ে ভিড় করছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। অনলাইনে নিজের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেখতে না পেয়ে দিশেহারা তারা।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আব্দুল কাইয়ুয়ের আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মীর মাহবুব আলম।

নিহত আব্দুল কাইয়ুম উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রায়পুরার ৩০টি আউটলেট (এজেন্ট শাখা) তার অধীনে ছিল।

অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আলগী বাজার শাখার উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটনের বাড়ি একই উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে। ঘটনার পর থেকে তিনি এখনো পলাতক রয়েছেন।

নিহতের স্বজনরা জানান, সম্প্রতি উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের আলগী বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকেই কাইয়ুমের ওপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেন ব্যাংকটির নরসিংদী শাখার রিজিওনাল ম্যানেজার (আরএম) রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। একপর্যায়ে রেদোয়ান ‘গ্রাহকদের সকল টাকা পরিশোধ করব’ মর্মে কাইয়ুমের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন।

বারবার কর্তৃপক্ষের এমন চাপ সইতে না পেরে কাইয়ুম গত শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে নিকটস্থ মাহমুদাবাদ বাজার থেকে বিষ কিনে এনে তা পান করেন। বিষপানের কিছুক্ষণ পর স্বজনরা টের পেয়ে প্রথমে কাইয়ুমকে ভৈরবের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে আব্দুল কাইয়ুমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাইয়ুম গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান বলে জানান তার স্ত্রী আমেনা বেগমসহ স্বজনরা।

এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ডাচ-বাংলা ব্যাংককে ‘বিশ্বস্ত’ ধরে নিয়ে অনেকে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাদেরকে শাখা থেকে জমা রশিদও দেওয়া হয়েছিল। সব টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

সেলস ম্যানেজারের আত্মহত্যা কিংবা টাকা নিয়ে উদ্যোক্তার উধাও হওয়ার ব্যাপারে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি বলে জানান রায়পুরা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মীর মাহাবুবুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, শুনেছি বিষপানের কারণে নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য সকল কার্যক্রম ঢাকার শাহবাগ থানা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন