দেশজুড়ে

মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি, বান্দরবানে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর চলা সংঘর্ষের জেরে নিরাপত্তার কারণে  বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্তে আটটি শিক্ষা প্রতিষ্টান একদিনের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদ্রাসা রয়েছে ।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনের নির্দেশে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আবারও গোলাগুলি চলছে। বিস্ফোরিত হচ্ছে মর্টার শেল।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা  বলেন, 'সকাল থেকে মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলির কারণে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।'

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ  বলেন, সোমবার সকালেও একটি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাসহ আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

তিনি আরও বলেন, আমরা যারা এপারে বসবাস করছি সবাই আতঙ্কে আছি, কখন কোন সময় কি হয় জানি না। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে না যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।

এর মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এবং উখিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এখানে উস্কানি হিসাবে কাজ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে এক ধরনের নাশকতা হওয়ার আশঙ্কা আছে। কাজেই ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। মিয়ানমারে এই সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে নতুন করে আবারও রোহিঙ্গা আগমনের একটি শংকাও রয়েছে।

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর জানান, নতুন করে কোন রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে না। সীমান্তে বিজিবি কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আশা করেন তাদের চেকপোস্ট যেকোনো রকম মুভমেন্ট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এখন পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেননি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমর্ড পুলিশের স্বতন্ত্র তিনটি ব্যাটেলিয়ন উখিয়ার কতুপালং হয়ে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত বিস্তৃত ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত । একই সাথে একাধিক আনসার ক্যাম্প রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আর্মড পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে তাদের টহলও চলমান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে প্রাণ বাঁচাতে ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এতে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অবস্থানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখের বেশি। তাই রোহিঙ্গা প্রবেশ ঠেকাতে সরকার এবার বদ্ধ পরিকর।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন