‘শুটার মুসা’ ওমানে গ্রেপ্তার
রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা সুমন শিকদার মুসা ওরফে শুটার মুসাকে গ্রেপ্তার করেছে ওমান পুলিশ। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল।
অপারেশনের ১২ দিন আগে শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে পালান মুসা। গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন মুসা। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি শুটার মুসা নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ ইন্টারপোলের শাখা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এআইজি (এনসিবি) মহিউল ইসলাম বলেন, মুসাকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে অনেক দিন আগে থেকেই কাজ শুরু করেছি। ওমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ওমানে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরের মধ্যে আছেন, এটা জানানো হয়েছে। তবে ফেরত আসার আগে আর কিছু বলতে চাই না।
মুসা প্রথমে দুবাই গেলেও পরে সেখান থেকে ওমান পালিয়ে যান। এরপর ওমানের সঙ্গে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে বাংলাদেশ। সপ্তাহখানেকের মধ্যে পুলিশের একটি টিম মুসাকে আনতে ওমান যাচ্ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে, র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছিলেন, রাজধানীর শাহজাহানপুরে গুলিতে নিহত মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে দুবাই বসে হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। টিপু হত্যাকাণ্ডের ঠিক ১২ দিন আগে দুবাই চলে যান মুসা। দুবাই বসে হত্যার পুরো ছক কষেন তিনি। টিপুকে হত্যায় চুক্তি হয় ১৫ লাখ টাকা। এই ১৫ লাখ টাকা কে কত দেবে তাও ভাগ করে দেন মুসা। নয় লাখ টাকা দেন ওমর ফারুক। অবশিষ্ট ছয় লাখ টাকা দেন গ্রেফতার নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ও মুসা।
তিনি বলেন, দুবাই যাওয়ার আগে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যান মুসা, হুন্ডির মাধ্যমে আরও চার লাখ টাকা মুসাকে দেওয়া হয়। বাকি ছয় লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়। ছয় লাখের মধ্যে র্যাব গ্রেফতারের সময় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা জব্দ করে। দুবাই থাকা মুসা ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত ৩ নম্বর আসামি।
২৪ মার্চ ২০২২ রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় সড়কে প্রকাশ্যে গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। এছাড়া ঘটনাস্থলে একজন নিরীহ কলেজছাত্রী নিহত হন। পেশাদার কিলার বাহিনী এক থেকে দেড় মিনিটের অপারেশন শেষে পালিয়ে যায়। ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে টিপুর দিকে। এর মধ্যে তার শরীরে সাত রাউন্ড গুলি লাগে। মতিঝিলের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশের জেরে এবং পূর্ববর্তী কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখানে আন্ডারওয়ার্ল্ডেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। হত্যার পর নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ-র্যাব।
এসআই/