পুতিনের শাস্তি দাবি রাশিয়ার প্রধান বিরোধী নেতা নাভালনির স্ত্রীর
রাশিয়ার প্রধান বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যুর সংবাদের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া। তবে এ সংবাদ যদি সত্য হয় সেক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউলিয়া বলেছেন, ‘আমি জানি না এটি (নাভালনির মৃত্যু সংবাদ) সত্য কি না। আমরা পুতিন এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনকে বিশ্বাস করতে পারি না। তারা সবসময় মিথ্যা বলে। তবে যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমি চাই পুতিন, তার সব অনুগামী-অনুসারী, পুতিনের মিত্র এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকার— সবাই এর দায় বহন করবে; যা তারা আমাদের দেশ, আমার পরিবার এবং আমার স্বামীর সঙ্গে করেছে।’
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জার্মানির মিউনিখ শহরে ইউরোপভিত্তিক জোট দাভোসের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সম্মেলন শুরু হয়েছে। ‘দাভোস অব ডিফেন্স’ নামের তিন দিনের এই সম্মেলনে যোগ দিতে ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে মিউনিখে উপস্থিত হয়েছেন শত শত রাজনীতিবিদ, সামরিক কর্মকর্তা এবং কূটনীতিক।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে ইসরায়েল ও ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে— এই নিয়ে ইতোমধ্যে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ইউরোপ। দাভোস অব ডিফেন্স সম্মেলন আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য এটিই।
কিন্তু নাভালনির মৃত্যু সংবাদ সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়। দাভোস অব ডিফেন্সের আয়োজকরা সম্মেলন শুরুর দিন শুক্রবার নির্ধারিত আলোচানা স্থগিত রেখে ইউলিয়া নাভালনায়াকে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি যখন বক্তব্য দেয়ার জন্য মঞ্চে ওঠেন, সে সময় সম্মেলনে উপস্থিত সবাই তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান।
নাভালনায়া বলেন, ‘এখানে আসার আগে দীর্ঘ সময় ধরে আমি ভেবেছি যে আমার কি এখানে আসা উচিত, না কি শিগগিরই মস্কোতে আমার ছেলে মেয়েদের কাছে যাওয়া উচিত।’
‘কিন্তু তখন আমার মনে হলো, এই অবস্থায় অ্যালেক্সেই থাকলে কী করতেন। আমি নিশ্চিত, তিনি এই মঞ্চে উপস্থিত থাকতেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কমলা বলেন, অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু সংবাদ যদি সত্য হয়, তাহলে এটি হবে পুতিনের নিষ্ঠুরতার আরও একটি উদাহারণ।
‘যদি সত্যিই এটি ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই রাশিয়া এর জন্য দায়ী— এটা আমরা স্পষ্টভাবে বলছি,’ সম্মেলন মঞ্চে বলেন কমলা হ্যারিস।
সম্মেলনের অবসরে কমলা হ্যারিস এবং অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে ইউলিয়া নাভালনায়া আলাদাভাবে কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। রাশিয়ার কোনো কর্মকর্তা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।
শুক্রবার তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এক বিবৃতিতে ইয়ামালো নেনত্স কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, এই দিন সকালে কারাগারের ভেতর হাঁটার সময় হঠাৎ তিনি অসুস্থ বোধ করেন এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কারা চিকিৎকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়; সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাভালনিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঠিক কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, বিবৃতিতে তা স্পষ্ট করেনি কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে তার মৃত্যু হয়েছে—সেকথা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। কারণ, দুই দিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়ার উদ্দেশে একটি আবেগপূর্ণ ভিডিওবার্তা দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাকে বেশ হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত মনে হয়েছে।
নাভালনির সমর্থকদের একাংশের অভিযোগ, কারাগারে খুন করা হয়েছে নাভালনিকে এবং প্রশাসন সেটি আড়াল করতে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করছে।
নাভালনির প্রধান সহকারী লিওনিদ ভলকোভ বলেছেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রের প্রচারণা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। তার মৃ্ত্যুর খবর যদি সত্য হয়,তাহলে নাভালনি মরেননি। পুতিনই তাকে (নাভালনি) খুন করেছেন।’
তবে শুক্রবার এক বার্তায় পুতিনের মুখপাত্র এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।