জাতীয়

যেকারণে বাংলা এখনও হয়নি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা

২১ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত  ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় পর ১৯৫৪ সালের ৭মে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে পাকিস্তানের সংসদ। তবে সংবিধান অনুযায়ি রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি কার্যকর হতে লেগেছিলো আরও দুই বছর।

বাংলা শুধু বাংলার মাটিতে নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষারও সম্মান পায়। তারিখটি ছিলো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। শুধু তাই নয়। বাংলাদেশীদের প্রতি সম্মান জানাতে সিয়েরা লিওনেও দ্বিতীয় দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। এবার জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পালা।

জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে- আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রাশিয়ান ও স্প্যানিশ। ভাষাভাষীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলা এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। সে বিবেচনায় বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করে নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ সরকারও সেই দাবির বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই এখন সরকারের লক্ষ্য। এদিন সকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

বাংলা বিশ্বের ‘অন্যতম ভাষা’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে ৩৫ কোটির বেশি বাংলা ভাষাভাষী মানুষ আছেন। আমাদের এখন লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

কেন এখনও সম্ভব হয়নি?

২০১০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেছিলেন যে, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের একটি অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

যুক্তি দিয়ে ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যেহেতু বাংলা ভাষায় বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে এবং এ ভাষার শিল্প, সাহিত্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। আমাদের সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, যাতে জাতিসংঘকে বাংলাকে তাদের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ জানানো হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এই ন্যায্য অনুরোধটি গ্রহণ করার জন্য আমি আপনাদের সবার কাছে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।

পরবর্তীতে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সেসময় আর্থিক অজুহাতে রেজ্যুলেশনটি পাস না হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই আহবান ও জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির চেষ্টার পরও এখনও বাংলা ভাষাকে  জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। কেন সম্ভব হয়নি প্রশ্নের জবাব বিভিন্ন সময়ে দিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

২০২৩ সালের  ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে  জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কার্যক্রমের প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছে। জাতিসংঘের বৃহত্তম পুনর্গঠন যখন হবে তখন আমরা আমাদের বিষয়টি তুলে ধরব।

ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তহবিলের বিশাল সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং আকাঙ্ক্ষা থাকলেও প্রতি বছর এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা এই মুহূর্তে যৌক্তিক হবে কিনা তা ভাবতে হবে।'

শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের  বলেন, 'আমরা প্রায় ৫ থেকে ৬ বছর আগে হিসাব করেছি যে, এর জন্য প্রতিবছর ৮০০ কোটি টাকা লাগবে।' 'আমরা এটি সম্পর্কে চিন্তা করেছি এবং এটি নিয়ে কাজ করেছি।'

এর আগে, ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো আপত্তি নেই। তবে সেজন্য যে খরচ হবে, তা বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। প্রাথমিক আলোচনায় সেজন্য প্রতি বছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। মোমেন সেদিন বলেছিলেন, জাপানি, হিন্দি ও জার্মান ভাষার জন্যও একই প্রস্তাব করা হয়েছিল। নিজস্ব খরচ বহনের শর্তের কারণে সেগুলোও দাপ্তরিক ভাষা হয়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে  আরও বলেন,  'জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, জাতিসংঘে একটি নতুন দাপ্তরিক ভাষা চালু করার জন্য তাদের প্রতি বছর ৬০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন