আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সমকামী ছেলেকে ‘সুস্থ’ করতে ধর্ষণ, অতঃপর...

নিউ ইয়র্কের ডাকসাইটে সুন্দরী,নামজাদা মডেল ছিলেন বারবারা ডালি বিকল্যান্ড। শহরের ধনী সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্রও! মারকাটারি ধনী স্বামী আর একমাত্র পুত্রসন্তানকে নিয়ে সুখে থাকতে পারতেন। কিন্তু বারবারা তা পারেননি। তার জীবন একটা সময় এমন বাঁক নেয় যে, বারবারার নাম শুনলেও ঘৃণায় নাক কুচকাতে শুরু করে পুরো নিউ ইয়র্ক।

কেমব্রিজে অতি সাধারণ পরিবারের জন্ম বারবারার। তবে তিনি সেখান থেকে নিজেকে নিউ ইয়র্কের অভিজাত জগতে টেনে তুলেছিলেন। শহরের সেরা দশ সুন্দরীর একজন বলা হত বারবারাকে। সমালোচকরা বলতেন, ওই ‘সম্পদ’-এর জোরেই ধনী স্বামী পেয়েছিলেন বারবারা। নিউ ইয়র্কের প্লাস্টিক ব্যবসার একচ্ছত্র ব্যবসায়ীর বিপুল সম্পদের একমাত্র উত্তরাধিকারী ব্রুক বিকল্যান্ডকে বিয়ে করেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত টেকেনি সেই বিয়ে।

ব্রুক আর বারবারাকে নিউ ইয়র্কের অভিজাত সমাজ চিনত যথেচ্ছা টাকা ওড়ানোর জন্য। প্রায়শই পার্টি দিতেন এ দম্পতি। এছাড়াও বারবারা আর ব্রুক অন্য একটি কারণে চর্চায় থাকতেন সব সময়ে। প্রকাশ্যেই বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হতেন এ অভিজাত দম্পতি।

ব্রুক-বারবারার সম্পর্কের এ অদ্ভুত রসায়ন সবাই জানতেন। আর যেটা জানতেন না সেটা হল, ছেলে অ্যান্টনি বিকল্যান্ডের সঙ্গেও বারবারার এক অন্যরকম বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। এতটাই যে, ছেলের কার সাথে কেমন সম্পর্ক, যৌনতা, সঙ্গী বাছাই নিয়েও নিজের মতামত দিতেন বারবারা।

অ্যান্টনি ছিলেন সমকামী। আর বারবারা কোনও দিনই এ ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেননি। ছেলের পছন্দ বদলাতে প্রথমে মহিলা যৌনকর্মীর সাহায্য নেন তিনি। তাতেও কাজ না হওয়ায় স্পেন থেকে ‘বান্ধবী’ জোটান ছেলের জন্য। কিন্তু অ্যান্টনির বদলে তার বান্ধবীর প্রেমে পড়ে যান তার বাবা ব্রুক।

আগেও ব্রুকের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতেন বারবারা। কিন্তু ছেলের বান্ধবীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তিনি আত্মহত্যা করতে যান। ১৯৬৮ সালে এ ঘটনার পরে ব্রুকের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন বারবারা। তিনি তখন ৪৭। আর তাদের একমাত্র সন্তান অ্যান্টনির বয়স ২২।

এরপর যা হয় তা শুনে চমকে ওঠে গোটা নিউ ইয়র্ক। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের বছরেই ছেলে অ্যান্টনিকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বারবারার বিরুদ্ধে। যদিও সেই অভিযোগের অস্বীকার করেন বারবারা। তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ আমি ছেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছি সত্যি কিন্তু ধর্ষণ করিনি, আমি ছেলেকে সুস্থ করার চেষ্টা করেছি মাত্র।’’

এ ব্যাপারে অ্যান্টনির বক্তব্য জানা যায়নি। তবে এ ঘটনার ঠিক চার বছর পর লন্ডনের বাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় ৫১ বছরের বারবারার দেহ। কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল বারবারাকে। ঘটনাস্থলে অ্যান্টনি ছিলেন। সবজি কাটার সেই ছুরিতে তার হাতের ছাপও পাওয়া যায়।

আদালতে অ্যান্টনিকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি মাকে খুন করার কথা স্বীকার করে নেন। তবে কেন খুন করেছেন, তার কারণ স্পষ্ট করে বলেননি। শুধু আইনজীবীকে জানিয়েছিলেন, খুনের রাতে মায়ের সঙ্গে এক বন্ধুকে বাড়িতে রাখা নিয়ে ঝগড়া হয় তার।

খুনের অপরাধে জেলে পাঠানো হয় অ্যান্টনিকে। তবে তার বাবা ব্রুক বছর কয়েক পরেই ছেলেকে ছাড়িয়েও আনেন জেল থেকে। আদালতকে তিনি জানান, তার ছেলে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। গেলো কয়েক বছর ধরে তার সঙ্গে যা যা হয়েছে, তার জন্য মানসিক রোগেরও আক্রান্ত হয়েছেন। মাকে খুন করার সিদ্ধান্ত ছেলে নিয়েছে মানসিক রোগের কারণেই।

দীর্ঘ শুনানির পর আদালত অ্যান্টনিকে বাড়ি যেতে দিতে রাজি হয়। তাকে তার দাদির দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। জেল থেকে বেরোনোর আট দিনের মধ্যে অ্যান্টনি তার দাদিকেও একই ভাবে কুপিয়ে খুন করেন। আবার জেলে যান অ্যান্টনি।

সত্তরের দশকের এ ঘটনা ঘিরে সাড়া পড়ে যায় গোটা নিউইয়র্কে। পরে এ নিয়ে একটি সিনেমাও তৈরি হয় হলিউডে।

‘স্যাভেজ গ্রেস’ নামে ওই ছবিতে বারবারার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন হলিউডের দুই নামী অভিনেতা জুলিয়েন মূর এবং এডি রেডমায়ার।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন