বাংলাদেশ

বাস্তবে আয়নাবাজি : শিপুর হয়ে জেল খাটেন আল আমিন

আবারও সিনেমার আয়নাবাজি ধরা পড়লো বাস্তবে। ২০১২ সালে ডেমরা থানায় গাড়ি ভাংচুরের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি কর্মী শিপু মিয়ার হয়ে জেল খাটলেন নিরপরাধ আল আমিন।

সোমবার (৪ মার্চ) আল আমিন একযুগ আগে ডেমরা থানার ওই মামলায় দণ্ডিত শিপু মিয়ার স্থলে সাজা ভোগ করছেন মর্মে প্রকাশ্য আদালতে স্বীকার করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সাজা পরোয়ানামূলে প্রাপ্ত বন্দির ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) কর্তৃক অনলাইন ডাটাবেজ করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম- আল আমিন ও বাবার নাম জালাল বেপারী দেখতে পান। জালিয়াতি ধরা পড়ার পর আসামি মো. আল আমিন এ ঘটনায় ২৬ ফেব্রুয়ারি কারাগারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তিনি একটি মামলার অভিযোগে আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে অবস্থান করছেন।  ফিরোজ নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ হাজার টাকার প্রলোভনে পড়ে ওই মামলার মূল আসামি শিপু মিয়ার দুই বছর ছয় মাসের সাজা ভোগ করার জন্য এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে ঢোকেন তিনি।  এ ধরনের কাজের জন্য আদালতের কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালে গাড়ি ভাংচুরের মামলায় ৪৫ জনকে আসামি করে  ডেমরা থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম ফেরদৌস বসুনিয়া বাদী হয়ে ৪৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করন।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে চার্জশিটভুক্ত সব আসামিকে পৃথক তিন ধারায় মোট আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ২৭ নম্বর আসামি ছিলেন শিপু মিয়া। তাকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। দণ্ডিত শিপু রাজধানীর ডেমরা থানাধীন সান্দিয়া কালুঘাট এলাকার মানিক মেম্বারের ছেলে।

এদিকে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের সাবেক কর্মী আল আমিনকে। তাঁর পূর্বের কর্মস্থলের মালিক ফিরোজ একদিন ফোন দিয়ে চাকরির কথা বলে। তাঁর জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে ঢাকা আসতে বলেন।

এরপর এক নারী আইনজীবীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় আল আমিনকে। সেখানে তার আইডি কার্ড নিয়ে নামের জায়গায় শিপু মিয়া লিখা হয়। পরে তাকে বিশ হাজার টাকা দিয়ে আদালতে যেতে বলেন ফিরোজ।

পরে মূল আসামি শিপু মিয়ার জায়গায় আল আমিনকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে দাঁড় করিয়ে একটি মামলায় আত্মসমর্পণ করে আপিল শর্তে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

উল্লেখ্য,  এ ঘটনায় কোতয়ালী থানায় আল আমিন, শিপু মিয়া ও ফিরোজের নামে একটি মামলা করেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আনোয়ারুল হক।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন