নাগেশ্বরীতে পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ, ভেঙেছে ২ শতাধিক ঘর-বাড়ী
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বেড়েই চলছে পানি। ক্রমেই ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে বন্যা। তার এ আগ্রাসী ও ভয়ঙ্করী রুপে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ। কেউ কেউ বাড়ী-ঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে অন্যত্র।
বেরুবাড়ী ইউনিয়নের সুইসগেট সংলগ্ন ইসলামপুর, বামনডাঙ্গার মালিয়ানী ও নামাহাইল্যায় পাগলাকুড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গত তিনদিন ধরে হু-হু শব্দে প্রবেশ করছে পানি। প্রতি মহুর্তে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সেখানে বিস্তৃর্ণ জলরাশিতে ছবির মত ভাসছে ঘর-বাড়ি। তলিয়ে যাওয়া রাস্তা-ঘাট তীব্র স্রোতে ভেঙে যাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে নদী পাড়ের কিছু ঘর-বাড়ি।
নুনখাওয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য রাশেদুল ইসলাম জানান, বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে নুনখাওয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন পুর্ব কাপনায় ২ শতাধিক ঘর-বড়ী। এদিকে পানি বৃদ্ধির হার এত বেশি যে, চিন্তা করে গুছিয়ে অন্যত্র যাওয়ার আগেই পরিবার নিয়ে বাড়িতেই আটকা পড়ছেন মানুষ। অনেকে কোনমতে তাদের গরু ছাগল সরিয়ে নিয়েছেন অন্যত্র। তারপরেও সঙ্গী হয়েছে তাদের অসহনীয় দুর্ভোগ। চলাচলে কলাগাছের ভেলাই এখন তাদের একমাত্র ভরসা। হাটু বা কোমড় পানিতে দাঁড়িয়ে সেখানেই সারতে হচ্ছে রান্নার কাজ। চৌকির উপর চৌকি দিয়ে কোনমতে কাটাচ্ছেন রাত। কোথাও টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। তবে পানি যে গতি ও উচ্চতায় বাড়ছে তাতে বন্যা আরো ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেখা দিবে শুকনো খাবারের সংকট ও স্বাস্থ্য সমস্যা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যানুযায়ী ইতোমধ্যে বামনডাঙ্গা, বেরুবাড়ী, রায়গঞ্জ, কালীগঞ্জ, কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস, নুনখাওয়া, নারায়ণপুর ইউনিয়ন প্রায় সম্পুর্ণ ও পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড প্লাবিত। এখানে ২৫ হাজার পরিবারের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন। এদের কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অপেক্ষাকৃত উচু জায়গায়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখাখারুল ইসলাম জানান, বন্যার্তদের আশ্রয় দিতে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় সরকারীভাবে ৬৯ টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়াও আমরা সার্বক্ষনিক খবর নিচ্ছি। আমাদের নিজস্ব নৌকা না থাকায় দুর্গতদের উদ্ধারে ভাড়া নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বানভাসীদের সহায়তায় গত ২দিন রায়গঞ্জ ও বেরুবাড়ীতে ৯ মে.টন জিআর চাউল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ৪৫ মে.টন জিআর চাউল ও দেড় লক্ষ টাকা জিআর বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।