আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

তাদের নেতা হিসেবে কে নির্বাচনে অংশ নেবে : প্রধানমন্ত্রী

যখন একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, জনগণের তাদের উপর এই আস্থা থাকতে হয়। নির্বাচনে তারা জয়লাভ করলে কে তাদের সরকারের প্রধান হবে-সেটা জনগণ আগে থেকেই জানতে চায়। তাদের (বিএনপি) নেতা হিসেবে কে নির্বাচনে অংশ নেবে। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার (২২ জুন) প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের শাপলা হলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তারা (বিএনপি) কি তাদের নেতা হিসেবে জনগণকে পলাতক (তারেক রহমান)-কে দেখাবে? তিনি তো দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, সহজেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেতে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে! কিভাবে একজন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ব্রিটিশ নাগরিক হল- তা বের করেন সাংবাদিকরা। যদি আপনারা এটা বের করতে পারেন, তবে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।

তিনি আরো বলেন, ‘তাই, তারা (বিএনপি) কিভাবে নির্বাচনে অংশ নিবে এবং এক্ষেত্রে গণতন্ত্রের ভুলটা কোথায়? তাদের দল এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে- যাদের এখন আর কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই।’   

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া, অবশিষ্ট রইল বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো-যেগুলো অব্যহতভাবে বিভক্ত হতে হতে ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে গেছে এবং এখন দলগুলো কখনো ডান দিকে কখনো বা বাম দিকে ঝুঁকে যায়।

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তাই, আমাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কে আছে?’ একটি শক্তিশালী দল গঠন করে নির্বাচনের মাঠে আসুন। নির্বাচনের ময়দানে নামি এবং জনগণকে বেছে নিতে দেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবাধিকার আমাদের শিখাতে আসবে কারা যারা খুনীদের আশ্রয় দেয়, স্কুলে গুলি হয়, ছাত্র-ছাত্রী মারা যায়, রাস্তা ঘাটে পুলিশ মানুষকে গলায় পারিয়ে মেরে ফেলে তারা কি মানবাধিকার শেখাবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কখনো কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি, করবেও না। আমাদের যে আত্মবিশ্বাস আছে তা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব এবং জনগণের শক্তি নিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি ১৯৯১ সালেও প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কারণ, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ তাঁকে জাতীয় পার্টি ও জামাতের সাথে জোট বেঁধে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার তার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি সেভাবে ক্ষমতায় যেতে চাই নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘তখন আমি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ক্ষমতায় যেতে পারিনি। যখন আমার কাছে সম্পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে, তখনই আমি সরকার গঠন করব। আমার দেশের উন্নয়নে একটি সরকার গঠন করার ইচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে দেশের উন্নয়নের ভিত গড়ে তোলেন এবং পরে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপির আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয় এবং লুটপাট, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, বাংলাভাইয়ের উত্থান ঘটে। তখন জরুরি পরিস্থিতিতে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আসে।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, জাতির জীবন থেকে মূল্যবান আটটি বছর নষ্ট হয়।’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল যে বাংলাদেশকে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কিন্তু, আমি তাদের স্পষ্টভাবে বলেছিলাম যে বাংলাদেশের জনগণ এই গ্যাসের মালিক। তাই যখন আমার দেশের প্রয়োজন মিটবে, দেশের উন্নয়ন হবে, ৫০ বছরের গ্যাসের মজুদ নিশ্চিত হবে তখনই আমি বাড়তি গ্যাস বিক্রি করব।

তিনি বলেন, এটা আমার দোষ ছিল যে আমি আমার দেশের সম্পদ রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। সে কারণেই আমাকে ক্ষমতা গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা হয়। আমি যেকোনভাবে ক্ষমতা গ্রহণ প্রধানমন্ত্রী হতে চাইনি।

তিনি আরও বলেন, তিনি জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চান না।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সেই ব্যক্তি যিনি সামরিক স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, আন্দোলন করেছেন, জেল-জুলুম, বোমা, গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি করেছেন। আমি গণতন্ত্র রক্ষা করতে এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন