সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পদক নিলেন অভিনেত্রী শবনম
পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ গ্রহণ করলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনম। গত শনিবার রাজধানীর ইসলামবাবাদে দেশটির প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি।পাকিস্তানের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে এই সম্মানসূচক পুরস্কার এ দেওয়া হয়।
সম্মাননা প্রাপ্তিতে অনুভূতি জানিয়ে ৮১ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী বলেন, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এমন একটি সম্মাননা পেয়ে তিনি গর্বিত। বাংলাদেশের মেয়ে হয়ে পাকিস্তানের সিনেমায় সম্মানের সাথে কাজ করেছেন। এটাই তার কাজের স্বীকৃতি। পুরস্কারটি গ্রহণ করার সময় চারিদিকে করতালিতে মুখর হয়ে উঠে। এ দৃশ্য ভুলবার না বলেও তিনি জানান।’
চিত্রপরিচালক এহতেশামের ‘এদেশ তোমার আমার’ ছবি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন শবনম। ওই ছবিতে নৃত্যে অভিনয়ের সুযোগ দেন।এহতেশামের আরও কিছু সিনেমায় অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবেও অভিনয় করেন শবনম। কিন্তু এহতেশামের পাশাপাশি পরিচালক মুস্তাফিজের নজর কাড়তে সক্ষম হন অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেই। মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৬১ সালে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এতে তিনি ঝর্ণা বসাক থেকে ‘শবনম’ নাম ধারণ করেন।
তবে উর্দু চলচ্চিত্রে তাকে তারকাখ্যাতি এনে দেন পরিচালক এহতেশাম। ১৯৬৮ সালে তার পরিচালিত চান্দা ছবিতে অভিনয়ের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে যান শবনম। তার দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য চান্দা সিনেমাটি ব্লকবাস্টার হিট হয়। পাকিস্তানে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান এই অভিনেত্রী।পাকিস্তানের সিনেমায় তার অবদান এতোটাই যে, সেখানে ‘মহানায়িকা’ও বলা হয় শবনমকে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে শবনমকে ঘিরে ছবির প্রচুর লগ্নি থাকায় দেশের মাটিতে ফিরতে পারেন তিনি। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময় তাকে রাখা হয় কঠিন নজরদারিতে। পরবর্তীতে জন্মভূমিতে ফিরলেও অভিনয়ের জন্য আশা-যাওয়ার মধ্যেই থেকেছেন শবনম। ততদিনে পাকিস্তানের ইন্ডাস্ট্রি শবনমনির্ভর হয়ে ওঠে। ১৩টি নিগার আর ৩টি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পারও শবনম পাকিস্তানে স্থায়ী হননি; ফেরেন আপন ভূমিতেই।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে শবনম পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। সেখানে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত একচ্ছত্র বিস্তার করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এর দশক পর্যন্ত তিন দশক ধারাবাহিকভাবে একটি ইন্ড্রাস্টিতে সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন শবনম। তিনি মোট ১৭০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে ১৫২টিই উর্দু সিনেমা। মাত্র ১৪টি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন শবনম। আর পাঞ্জাবি ভাষায় তার অভিনীত ছবির সংখ্যা ৪টি।