উত্তর আমেরিকা

বাল্টিমোর ব্রিজ: জাহাজটিতে বিদ্যুৎ ছিলো না, অসহায় ছিলো নাবিকরা

কনটেইনারবাহী একটি জাহাজের ধাক্কায় ভেঙ্গে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্রিজ। ডালি নামের ওই জাহাজটি ২৬ মার্চ ভোরে বাল্টিমোরের ল্যান্ডমার্ক হিসাবে পরিচিত পাটাপস্কো নদীর ওপরে ফ্রান্সিস স্কট কী সেতুটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সেতুটির একাংশ ভেঙ্গে নদীতে গিয়ে পড়ে।  এ দুর্ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তল্লাশি কাজ আর না করায় তাদের সবার মৃত্যুর আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

তবে দুর্ঘটনায় ধাক্কা দেওয়া জাহাজটির নাবিক-ক্রুদের সবাই নিরাপদে রয়েছেন। ‘ডালি’ নামে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী কন্টেইনার জাহাজটির পরিচালনা করা শিপিং কোম্পানি মায়েরস্ক-এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জাহাজটিতে মোট ২২ জন ক্রু ছিলেন, তাদের সবাই ভারতীয়। তাদের কেউই আহত হননি।

দুর্ঘটনার সময়ে একটি লাইভ ভিডিও পোস্টে দেখা যায়, একটি জাহাজ সেতুটিতে আঘাত করার পর সেটির স্প্যানগুলির একটি বড় অংশ ধসে নিচের প্যাটাপসকো নদীতে গিয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এও জাহাজের ধাক্কা এবং সেতু ধসে পড়ার কিছু ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।

নাবিকরা জানতো জাহাজটি সেতুটিকে আঘাত করতে যাচ্ছে। তারপরও নাবিকদের করার কিছুই ছিল না। সেতুটিকে জাহাজ আঘাত করার আগে নাবিকদের পাঠানো একটি বার্তায় এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে বার্তা পাঠানোর ফলে নতুন করে কোনো যানবাহন সেতুতে উঠতে না দেয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কমেছে।

মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর বলেছেন, ধাক্কা দেওয়ার আগে ৩০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজটি ঘণ্টায় নয় মাইল গতিতে চলছিল। ব্রিজে ধাক্কা দেয়ার আগেই বিপদ বুঝে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল জাহাজের পক্ষ থেকে।  তাই ব্রিজে নতুন করে আর গাড়ি উঠতে দেয়া হয়নি। একারণে ক্ষয়ক্ষতি সামান্য হয়েছে।যদি জাহাজটি আগে না জানাত, তবে বহু মানুষের প্রাণহানি হতে পারত।

বাল্টিমোর বন্দর থেকে শ্রীলংকায় ২৭ দিনের যাত্রার শুরুতে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার পর জাহাজটির বিদ্যুৎ একেবারেই চলে গিয়েছিল।  ওইসময় জাহাজটি ফ্রান্সিস স্কট কী সেতুর দিকে যাচ্ছিল৷ মধ্যরাতের দিকে জাহাজের আলো হঠাৎ নিভে যায়।  এতে জাহাজটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। কোনো ইলেকট্রনিক্স বা ইঞ্জিনের পাওয়ার ছিলো না।  তাই যা ঘটছিল তখন তা থামানোর জন্য নাবিকদের কোন উপায় ছিলো না।

সমস্যাটি সমাধান করতে এবং বিদ্যুৎ ফিরে পেতে নাবিকদের আপ্রাণ ব্যর্থ চেষ্টার সময় একাধিক অ্যালার্ম বেজে উঠেছিলো। জাহাজের পাইলট নাবিকদের আদেশ দিয়েছিলেন, রাডারটিকে পোর্টের দিকে শক্তভাবে ধরে রাখতে।  নোঙ্গর ফেলে দিতে বলেছিলেন যাতে স্টারবোর্ডটি ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।

একটি জরুরী জেনারেটর থাকলেও জাহাজের ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করা যায়নি। জাহাজটির পাইলটের আর কোন উপায় ছিল না।  দিবাগত রাত দেড়টার কিছু আগে, জাহাজটির নাবিকেরা  কল করে আসন্ন সংঘর্ষের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে।

ব্রিজ  দুর্ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন জো বাইডেন বলেছেন, এখন পর্যন্ত সবকিছু ইঙ্গিত করে যে এটি একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ছিলো। এই দুর্ঘটনায় তাদের কাছে অন্য কোনো ইঙ্গিত নেই বলেও তিনি জানান।

২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন ফর ওয়াটারবর্ন ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রতিবেদন বোলছে,  ১৯৬০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী জাহাজ বা বার্জের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে ৩৫টি বড় সেতু ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।  এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন