দেশজুড়ে

টেলিভিশনের বুম নিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ১

ঢাকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে প্রাইভেট কার ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বুম নিয়ে এতিমখানায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে মনিরুজ্জামান (৫৭) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় চাঁদাবাজির মূল হোতা এশিয়ান টিভির রিপোর্টার পরিচয়ধারী মেহেদী হাসান কবির (৩৭) পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার হওয়া মনিরুজ্জামান নিজেকে দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল নামে একটি পত্রিকার ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি পরিচয় দিলেও পলাতক মেহেদী হাসান কয়েক বছর আগে এশিয়ান টিভিতে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামানের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মদনপুর এলাকায় আর মেহেদী হাসানের বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার হোসেনপাড়া এলাকায়। মেহেদীর নেতৃত্বে তারা এভাবেই নিজেদের ঢাকার বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদেরকে ঠকিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আটক মনিরুজ্জামানকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ওইদিন রাতে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আক্কেল আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মনিরুজ্জামানকে দুপুরে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিকেও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসময় আটক প্রাইভেট কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আটক থাকা প্রাইভেট কারসহ চালক ভাড়ায় চালিত হওয়ায় এবং তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় দুপুরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

পুলিশ ও মামলার এজাহারে জানা গেছে, পঞ্চগড়ের এতিমখানা নিয়ে ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশ করার কথা বললে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাদের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকার বন্তোবস্তও করে। পরিচয় দিয়েছেন এশিয়ান টিভির রিপোর্টার হিসেবে। হাতে এশিয়ান টিভির বুম আর গলায় আইডি কার্ডও ঝুলিয়েছে। এরপর শুরু হয় তাদের মিশন। প্রাইভেট কার নিয়ে ছুটেন একের পর এক এতিমখানায়। নাম তালিকা ধরে বিভিন্ন এতিমখানায় গিয়ে শুরু করে চাঁদাবাজি। ভয়ভীতি দেখিয়ে কারো কাছে ৭ হাজার কারো কাছে ৮ হাজার টাকা নিয়ে ছুটেন তালিকায় থাকা অন্য এতিমখানাগুলোতে। তাদের অবস্থান চেনাতে তাদের সহযোগিতা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চকলাহাট ইউনিয়নের খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষকের কাছে হাতিয়ে নেয় ৮ হাজার ৫০০ টাকা। পরে তারা ছুটে খানবাহাদুর মোকলেছুর রহমান আলিম মাদরাসা ও এতিমখানায়। এদিকে কয়েকজন মাদরাসা শিক্ষক বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানালে তারা এশিয়ান টিভির অফিসে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন এরা প্রতারক। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মনিরুজ্জামানকে আটক করা হয়। এ সময় পালিয়ে যায় মেহেদী হাসান। তাদের ব্যবহৃত ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারটিও আটক করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। এর আগে গেলো ২৫ মার্চ (সোমবার) বিকেলে তারা পঞ্চগড়ে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় শুক্রবার ওই দুই ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা করেছেন খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষক রশিদুল হক। খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষক রশিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, তারা এসেই নিউজ করার নামে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে। নিউজ করলে আমাদের সমাজসেবার বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। চাপের মুখে আমি সাড়ে ৮ হাজার টাকা দেই তাদের। পরে আমি এলাকার অন্য মাদরাসায় খবর নিয়ে জানতে পারি একইভাবে তারা অনেক জায়গায় চাঁদাবাজি করেছে। এক পর্যায়ে তাদের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের মধ্যে একজনকে স্থানীয়রা আটক করলে আরেকজন পালিয়ে যায়। খানবাহাদুর মোকলেছুর রহমান আলিম মাদরাসা ও এতিমখানায় শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, তারা সকালে এসে একবার পরিদর্শন করে যায়। প্রত্যেক মাদরাসায় যাওয়ার সময় তাদের সাথে সমাজসেবার একজন অফিস সহকারী ছিলেন। দুপুরে আবার তারা আসে। এ সময় তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিলো না। এক পর্যায়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তাদের আটক করা হয়। মূল হোতা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে এশিয়ান টিভির পঞ্চগড়ের স্টাফ রিপোর্টার আকরুজ্জামান আকতার বলেন, আমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেহেদী এক সময় কিছুদিন চাকরি করলেও এখন কর্মরত নন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় আমাদের টেলিভিশনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের একজনকে স্থানীয়রা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পঞ্চগড় সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান বলেন, আমাদের পরিচালক মহোদয়কে তারা বলেছে যে এতিমখানা নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইতিবাচক নিউজ করবে। পরিচালক স্যারের নির্দেশনা পেয়ে ডিডি স্যারের নির্দেশেই আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করি। পঞ্চগড় সদর উপজেলার এতিমখানাগুলোর চেনার সুবিধার্থে আমাদের একজন অফিস সহকারীকে তাদের সাথে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা এমনটি করবে আমরা বুঝে উঠতে পারি নি।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন