মালিকের শিশু সন্তানকে অপহরণ, গৃহকর্মীসহ গ্রেপ্তার ১৭ রোহিঙ্গা
অপহরণ আর মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েই প্রবাসির বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন রোহিঙ্গা তরুণী উম্মে সালমা। আর সেই সুযোগেই ৯ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অপহরণও করা হয়েছিল ৬ বছরের শিশু ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে। আর ২২ দিনের মাথায় গত ৩০ মার্চ কুমিল্লার লালমাই থেকে শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে টেকনাফ থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ রাসেল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মোহাম্মাদ রাসেল জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উম্মে সালমা সৌদি প্রবাসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয়। সেখানে কিছু দিন কাজ করার পরে আব্দুল্লাহর সাথে সখ্যতা তৈরি করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, উম্মে সালমা ৯ মার্চ দুপুরে মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে আব্দুল্লাহর মায়ের মাথা ফেটে যাওয়ার কথা বলে। এরপরে হাসপাতালে মাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে আব্দুল্লাহকে অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় ভূক্তভোগী শিশুর মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখে। ১০ মার্চ সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাসহ চালক নাসির উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর দেয়া তথ্যে জড়িত আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, এর মধ্যে শিশুর মা নুরজাহান বেগমকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এমনকি মুক্তিপন না দিলে শিশুকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে মা কে ফোন দিয়ে শিশুকে বিভিন্ন সময় নির্মমভাবে মারধর করে এবং কান্নার শব্দ শোনায়।
ওসি জানান, পুলিশের অভিযান টের পেয়ে অপহরণকারীরা শিশুকে নিয়ে কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠে। এর মধ্যে মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে ৩০ মার্চ দুপুরে কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা উদ্ধার ছাড়াও অপহরণে ব্যবহৃত সিএনজি ও ৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানায় গ্রেপ্তার সবাই একে অপরের আত্মীয় এবং রোহিঙ্গা। সাদেক এই অপহরণ চক্রের হোতা এবং মূল পরিকল্পনাকারী।
গ্রেপ্তারকৃত ১৭ জন হলেন, টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাগু ডাকাতের ছেলে আনোয়ার সাদেক (২১), তার পিতা মৃত আবদুর শুক্কুরের ছেলে নাগু ডাকাত (৫৫), মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী লায়লা বেগম (৫৫), মোহাম্মদ খানের স্ত্রী উম্মে সালমা (২৪), নাগু ডাকাতের ভাই মোহাম্মদ হাশেম (২৭), সৈয়দুল হকের স্ত্রী খাতিজাতুল খোবরা (৩৫), নাগু ডাকাতের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৩২), সাদেকের স্ত্রী হোসনে আরা (২০), নাগু ডাকাতের অপর ছেলে রনি (১২), কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজির পাড়ায় বসবাসকারি পুরাতন রোহিঙ্গা জাফর আলমের ছেলে নাসির আলম (২৮), মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মাইস্যাঘোনা এলাকার মনছুর আলমের ছেলে সালামত উল্লাহ প্রকাশ সোনাইয়া (৪৫), একই ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার মৃত কালামিয়ার ছেলে জহির আহমেদ (৬৫), শামসুল আলমের ছেলে হাসমুল করিম তোহা (২০), সামিরাঘোনা এলাকার ফরিদুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ (১৯), মৃত রহমত উল্লাহ ছেলে ফরিদুল আলম খান (৫২), সালামত উল্লাহর ছেলে মো. আমির হোসেন (২৪), শামসুল আলমের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম তোহা (৩০)।
প্রসঙ্গত, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে।