জাতীয়

বাংলাদেশে কথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা আমলে নেয়নি ভারত

বাংলাদেশে গত তিন মাস ধরে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহবান জানিয়ে কথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চালানো এবং তাতে  বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমর্থন দেওয়াতে ভারত সরকার মোটেও বিচলিত নয়। এই জাতীয় প্রচারণার কোনও প্রভাব দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আদৌ পড়বে না।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকালে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জয়সওয়াল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি সরকার বুঝিয়ে দিলো তারা এবিষয়টিকে একদমই পাত্তা দিচ্ছে না। এমনকি বিষয়টিকে বিন্দুমাত্র আমল দিতেও রাজি নয় ভারত সরকার।

বাংলাদেশে প্রায় তিন মাস ধরে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে যে কথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চলছে তার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, দু’দেশের সম্পর্ক যেমন চলছে, তেমনই চলতে থাকবে।

দ্য প্রিন্টসহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশে গত বেশ কিছু দিন ধরে তথাকথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে একটি ক্যাম্পেইন চলছে। মূলত এর মাধ্যমে দেশের জনগণ যাতে ভারতীয় পণ্য বর্জন করে তার জন্য ডাক দেওয়া হচ্ছে। দেশটির  বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতাও এই ধরণের প্রচারণায় তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। আপনি কি এই আন্দোলন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইবেন? আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, ইন্ডিয়া আউট প্রচারণায় বাংলাদেশে-ভারতের রফতানির পরিমাণে কি কোনও প্রভাব পড়ছে?’

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘ দেখুন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী ও গভীর। আমাদের দুই দেশের মধ্যে আসলে একটি কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ (সর্বাত্মক অংশীদারিত্ব) আছে। আর এই  অংশীদারিত্ব দুই দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত।’

রণবীর জয়সওয়াল আরও বলেন, ‘অর্থনীতি থেকে শুরু করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ থেকে শুরু করে উন্নয়ন সহযোগিতা, কানেক্টিভিটি থেকে শুরু করে পিপল-টু-পিপল কনট্যাক্ট– মানবজীবনের যেকোনও ক্ষেত্রে আপনি যেকোনও একটা বিষয়ের নাম করুন, দেখবেন সেটা কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের সামগ্রিক সম্পর্কের অংশ।’

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের অংশীদারিত্ব ঠিক এতটাই প্রাণবন্ত। আর এই ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’

তবে দ্বিতীয় প্রশ্ন অর্থাৎ ইন্ডিয়া আউট প্রচারণায় বাংলাদেশে ভারতের পণ্য  রফতানির ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে কিনা-এর জবাব দেননি রণবীর জয়সওয়াল।

বাংলাদেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার বিষয়ে  প্রকাশ্যে এই মন্তব্যটুকুর মধ্যে নিজেদের প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ রাখলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র আরও জানায়, ‘স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা যেভাবে ‘ইন্ডিয়া আউটের’ দফারফা করে ছেড়েছেন, মোক্ষম জবাব দিয়েছেন তাতে ভারতের আলাদা করে আর কিছু বলার দরকারই নেই!

দিল্লিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন,  ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে প্রকাশ্যে বলেছেন বিএনপি নেতারা আগে নিজের স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দেখান (তাহলে বিশ্বাস করবো), তাতেই বোঝা যাচ্ছে এই প্রচারণা কতটা ভুয়া বা অন্তঃসারশূন্য! আর এরকম বলিষ্ঠ ভঙ্গিতে এটাকে নস্যাৎ করতে বোধহয় শুধু তিনিই( শেখ হাসিনা) পারেন। এরপর আর আমাদের (ভারতের) নতুন করে আর কিছু বলার দরকারও নেই’।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন