ঢাকাকে আলোকিত করতে গ্রামের বিদ্যুৎ ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে
রোজায় একদিকে গরম অপরদিকে লোডশেডিংয়ের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে গ্রামের মানুষকে। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণার যেনো শেষ নেই। দিন দিন পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠছে। । বিশেষ করে ইফতার, তারাবি আর সেহরির সময় লোডশেডিং অবর্ণনীয় কষ্ট দিচ্ছে। গ্রামে এই পরিস্থিতি আরও অসহনীয়। এখনই অনেক গ্রামে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
ঈদের ছুটিতে যখন ৭ থেকে ৮ কোটি মানুষ গ্রামে যাবেন তখন এই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে চিন্তিত খোদ বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
তাদের বক্তব্য, ঢাকাকে আলোকিত করতে গ্রামের বিদ্যুৎ ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাদের শঙ্কা এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠতে পারেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা দাবদাহে দেশজুড়ে গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের পার্থক্যও বাড়ছে গত কয়েকদিন ধরে। এর প্রভাবও বেশি পড়ছে গ্রামীণ ও পল্লি এলাকাতে। বিদ্যুতের জন্য হাহাকার থেকে কেন্দ্রে হামলা, মিছিল বের করার খবর এসেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানির অভাবে বা আমদানি করতে না পারায় গত ২ বছর গরমের সময় লোডশেডিং বেড়েছিল। শহরের দু-তিন ঘণ্টার লোডশেডিং হলেও গ্রামে ৮-১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিংয়ের অভিযোগ ছিল গ্রাহকদের। এবারও তেমন পরিস্থিতি হতে পারে। কেননা পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা-ডলারের সংস্থান নেই। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে অর্থের জোগান বাড়ানো হয়েছে। সেটাও যথেষ্ট হবে না এবার।
গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সূত্র জানায়, তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। তাই বিতরণেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে দিনে সংস্থাটি চাহিদার চেয়ে ঘণ্টায় প্রায় ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পেয়েছে। এখন এটি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ঈদের সময় আরও বাড়বে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল এবং কুমিল্লায় কিছু স্থানে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে। বাকি এলাকাগুলোতে দৈনিক ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
ইতোমধ্যে মন্ত্রী, এমপি ও সরকারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা গ্রামে আসা শুরু করেছেন। আগামীতে এসব ভিআইপিদের গ্রামে বিদ্যুৎ দিতে গিয়ে অন্য এলাকাগুলোর অবস্থা আরও ভয়ংকর হবে।
গ্রামে এখন ছোট ছোট শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এসব কারখানা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সচল থাকার কথা। কিন্তু ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ে বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ ক্ষুদ্র কারখানা। একই অবস্থা শিল্পকলকারখানা বিশেষ করে গার্মেন্টস ও ডায়িং শিল্পের। একের পর এক লোডশেডিংয়ে ধস নেমেছে এসব কারখানায়।
গত ৪-৫ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। রোজার মধ্যে সেহরি ও ইফতারের সময়েও অনেক এলাকার বাসিন্দারা লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের কম। বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকছে। সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম উৎপাদন করছে অনেক কেন্দ্র। দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে না পারায় এবং জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ও মার্কিন ডলারের জোগান না থাকায় তেল-গ্যাস-কয়লা আমদানিতে ভাটা পড়েছে।