আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ন্যায্য দাম পাচ্ছে না খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীরা

গেল সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে গত বছরের চেয়ে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৭ টাকা বেশি নির্ধারণ করে।  সেই আশায় এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় গরুর চামড়ার দাম কিছুটা বাড়বে বলে আশা করছিলেন কোরবানিদাতা, মৌসুমী ব্যবসায়ী, মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ।  তবে শেষ পর্যন্ত সে আশায় পূরণ হচ্ছে না।  গতবারের দামেই বিক্রি হচ্ছে লবণ ছাড়া গরুর চামড়া।

২০২১ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিলো। খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিলো প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১২ থেকে ১৪ টাকা ।

গেল সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ঢাকার বাইরে নির্ধারণ করে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। একই সঙ্গে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করে। ঢাকার বাইরে ও ঢাকায় বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই থাকবে।

সেই হিসেবে ২০২২ সালে প্রতি বর্গফুটে গরুর চামড়া ৭ টাকা এবং খাসির চামড়ায় ৩ টাকা বেশী দাম নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। কিন্ত বাড়তি সেই দাম দিচ্ছেন না অনেক আড়তদার। 

রোববার  (১০ জুলাই) কোরবানির চামড়া বেচা-কেনার সবচেয়ে বড় কেন্দ্র পুরনো ঢাকার পোস্তায় ছোট আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০–২৫০ টাকায়। আর মাঝারি ধরনের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০–৭৫০ টাকা। বড় আকারের গরুর চামড়া ৮০০–১১৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।

অধিকাংশ আড়তদার ছোট আকারের গরুর চামড়া এবং খাসি ও বকরির চামড়া কিনতে চাচ্ছেননা। ছোট আকারের গরুর চামড়ার দাম দিতে চাচ্ছে ১০০ টাকা।

আর খাসি ও বকরির চামড়া ১০ টাকার বেশি দামে কিনছেনা ট্যানারি মালিকরা।

পোস্তার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় আকারের গরুর চামড়া গড়ে ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ বর্গফুট এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুট আয়তন হয়। একটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরিসহ গড়ে ৩০০ টাকা তাদের খরচ হয়। গত বছরের তুলনায় এবার লবণের দাম দুইগুন বেড়েছে। একারনে তাদের খরচও  বেড়েছে।

একটি ২৫ বর্গফুট আয়তনের একটি গরুর চামড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দাম অনুসারে কিনলে লবণযুক্ত সেই চামড়ার দাম হয় ১ হাজার ২৩৭ টাকা। এরমধ্যে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি ৩০০ টাকা বাদ দিলে লবণবিহীন কাঁচা চামড়ার দাম হতে পারে ৯৩৭ টাকা। কিন্ত সেই মান ও আয়তনের চামড়া আজ পোস্তায় বিক্রি হচ্ছে ৫০০–৬০০ টাকা।

চামড়ার দাম কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আড়তদাররা বলছেন,  ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কমে গেছে। হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীতে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপ–আমেরিকার মতো বড় ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের চামড়া কিনছে না। ট্যানারির মালিকেরা বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায়  অনেক আড়তদার ও চামড়া ব্যবসায়ী এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ আশা করছেন, চলতি বছর ট্যানারিগুলো ১ কোটি ২০ লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করতে পারবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন