আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে বিএনপি: মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক
চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনে জয়ের পর টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধান হিসেবে নিজেকে অধিস্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে গণতন্ত্রের কথা বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে একমত হতে পারেনি।নির্বাচনের পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের বক্তব্য ছিলো- বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিলো না। তারপরও মার্কিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। এসব দিক দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর স্বর্ণযুগ উপভোগ করছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন তুলে একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরির আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
গত ৮ এপ্রিল ‘আটলান্টিক কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে’ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে ওই নিবন্ধটি লিখেছেন ভারতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ী যিনি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে একজন স্বাধীন বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।
Bangladesh’s election: Widely boycotted or widely acceptted? (বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়-বাংলাদেশের নির্বাচন: ব্যাপকভাবে বয়কট বা সর্বজন গৃহীত?) শিরোনামে ওই নিবন্ধে গৌতম লাহিড়ী লিখেছেন, ‘মার্কিন সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি লাভের সঙ্গে সঙ্গে ‘হাসিনার সরকার’ পরিচালনার জাহাজটি এখন মসৃণ সমুদ্রে যাত্রা করছে।’
লাহিড়ী তাঁর নিবন্ধে বলেন, ‘জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার দলের জয় এই অঞ্চলের প্রায় সব মহলেরই প্রশংসা কুড়িয়েছে। এশিয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি চীন ও ভারত উভয়েই তার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলো। প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক শক্তি, মতাদর্শগত এবং রাজনৈতিক ঝোঁক নির্বিশেষে তার প্রশাসনকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এসেছে। এদিক দিয়ে, শেখ হাসিনা একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
ভারতীয় এই সাংবাদিক লিখেছেন, ‘জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগ দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল, বাংলাদেশে তার কণ্ঠস্বর গণতন্ত্র প্রচারের প্রচেষ্টার কারণে। যদিও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছিল যে নির্বাচনগুলি অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না, মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং এগিয়ে যাওয়ার সাথে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওজন কমানোয় শেখ হাসিনার জাহাজ এখন মসৃণ সাগরে চলাচল করছে বলে মনে হচ্ছে।’
গৌতম লাহিড়ী আরো লিখেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচন বর্জন করলেও সব বিরোধী দল তা অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং প্রায় ১ হাজার ৯শ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।
গৌতম লাহিড়ী বলেন, নির্বাচনে মোট ভোটারের ৪১ দশমিক ৮ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এটি গতবারের চেয়ে কম। বিএনপির নির্বাচন বয়কট কর্মসূচির কারণে কিছু ভোটারদের উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে। তবে এটি কোনোভাবেই জনগণের ভোট প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে না।
ভারতীয় এই সাংবাদিক তার নিবন্ধে বলেন, ‘ভোটের দৌড়ে, বিএনপির নির্বাচন বিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় পরিণত হয়। শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির অনুগতদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের আগের দিন দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। অগ্নিসংযোগকারীরা ভোটকেন্দ্র এবং একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে চারজন নিহত হয়। আতঙ্কের এই বিরাজমান পরিস্থিতিতে কিছু ভোটারকে নির্বাচনের দিন বাড়িতেই অবস্থান করতে হয়েছে।’
গৌতস লাহিড়ী বলেন, আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের পর কতিপয় সমালোচক সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশ কার্যকরভাবে একদলীয় শাসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়েছে এবং এর অনুগত স্বতন্ত্ররা আরো ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারা যুক্তি দিয়ে বলেছেন, সংসদে কোনো অর্থবহ বিরোধী দল নেই।
ভারতের প্রেসক্লাবের এই সভাপতি আরও লিখেন, মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকি নিয়েছিল। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে কণ্ঠস্বরের বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
গৌতম লাহিড়ী উল্লেখ করেছেন, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।
গৌতম লাহিড়ী বলেন, ‘তাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল কেন বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে। ভারতীয় এই সাংবাদিক উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো নজির নেই বলে বিএনপি দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি তুলেছিলো। কিন্তু বিএনপির সেই দাবির এখন কোনো ভিত্তি নেই। বিএনপির নির্বাচন বয়কট শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সাহায্য করেছিল। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার চাইতে বিএনপি চেয়েছিলো ও আশা করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন তুলে একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরির। আর এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।