আন্তর্জাতিক

ইরানের যে অস্ত্র গোটা বিশ্বকে চোখ রাঙাচ্ছে

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আপাতত শেষ হলেও শেষ হচ্ছে না ইরানের যুদ্ধ। এবার যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করেছে দেশটি। এই কৌশলটি কাজে লাগলে থমকে যাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা। পারস্য উপসাগরের জ্বালানি ছাড়া হোঁচট খাবে উপসাগরীয় দেশগুলোসহ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের অনেকে দেশের অর্থনীতি।

সিরিয়ায় নিজেদের কনস্যুলেট ভবনে হামলার জবাব দেওয়া শেষ করেছে ইরান। তবে তেলআবিব পাল্টা পদক্ষেপ নিলে তেহরানও চুপ করে থাকবে না। সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেওয়া হবে-চালানো হবে ১০ গুণ বেশি হামলা। এমনই হুশিয়ারি  দিয়েছে ইরানের হাইকমাণ্ড।

তবে ইরানের এই হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দিচ্ছে না ইসরায়েল সরকার। যেকোনো মূল্যে তেহরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তেলআবিব। যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবিষয়ে এখনও সবুজ সংকেত দেয়নি। প্রধান মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রও হামলা চালানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারপরও প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ইসরায়েল।

তেলআবিবের যুদ্ধাংদেহী এই মনোভাবের কারণে বসে নেই তেহরানও। তারাও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। আকাশপথে যুদ্ধের পাশাপাশি এবার তারা পানিপথকেও বেঁছে নিয়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে ‘ভাতে মারা ও পানিতে মারা’র কৌশলে।  আর এক্ষেত্রে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে ব্যবহার করছে হরমুজ প্রণালীকে।  নিজেদের ওপর হামলা হলে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছে ইরান।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যর তেল যায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অন্যান্য জায়গায়। এ প্রণালীর একদিকে আছে আরব দেশগুলো যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভাল সম্পর্ক রয়েছে।  অন্য পাশে রয়েছে ইরান। হরমুজ প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ যে অংশ সেখানে ইরান এবং ওমানের দূরত্ব মাত্র ২১ মাইল। হরমুজ প্রণালীই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর। বলতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ এই  সমুদ্রপথ বন্ধের হুমকি দিয়ে গোটা বিশ্বকে চোখ রাঙাচ্ছে ইরান।

চোখ রাঙাবেই না কেন ইরান।  বিশ্বের মোট বাণিজ্যের ৮০ শতাংশই হয় সমুদ্রপথে। ২০২১ সালে একটি জাহাজ আটকে সুয়েজ খাল ছয় দিন বন্ধ রেখেছিল ইরান।  আর এতেই বিশ্ব অর্থনীতি এক হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়। আর এই খালের চেয়ে বেশি গুরুত্ব রাখে মধ্যপ্রাচ্যের হরমুজ প্রণালী। এ প্রণালী ছাড়া পারস্য উপসাগর পাড়ি দেওয়ার আর বিকল্প কোনো পথ নেই।

পৃথিবীর মোট জীবাশ্ম জ্বালানির প্রায় অর্ধেক রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলে।  জমা রয়েছে বিশ্বের মোট  প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ ভাগ। এসব জীবাশ্ম জ্বালানি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করতে পাড়ি দিতে হয় হরমুজ প্রণালি।  ফলে এ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া হলে  থমকে যাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা। পারস্য উপসাগরের জ্বালানি ছাড়া বহু দেশের অর্থনীতিই হোঁচট খাবে।

তাই কোনোভাবেই তেহরানের হাতে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ দিতে চায় না ওয়াশিংটন।  নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ এ নৌপথ রক্ষায় উপসাগরজুড়ে তাদের রয়েছে কয়েক ডজন সামরিক ঘাঁটি। সক্রিয় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর।

তবে নিয়ন্ত্রণ দখলে রাখতে দূরপাল্লার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে ইরান। এমনকি মজুত রেখেছে বিপুল পরিমাণ জলমাইন।  নিয়মিত টহল দিচ্ছে ইরানের কোস্টগার্ড বাহিনী।  নিজেদের ওপর হামলা হলে ইরান মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ করে দিবে গুরুত্বপূর্ণ এ হরমুজ প্রণালী।  আবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অবরোধের কারণে ইরান যদি তেল বিক্রি করতে না পারে, তবে কোনো উপসাগরীয় দেশই তা করতে পারবে না।  বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হয়তো এসব কারণেই ইরানকে খুব বেশি ক্ষ্যাপাতে চাইছে না যুক্তরাষ্ট্র। আর হামলায় তেলআবিবের সঙ্গী হতে চাইছে না ওয়াশিংটন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন