দেশজুড়ে

‘মাও বোঝেনি আমাকে’ লিখে ছাত্রীর আত্মহত্যা

মার কাছে মাঝে মধ্যে কাঁদি। মাও বোঝেনি আমাকে। আমি একটা বোঝা সবার কাছে। আমার এই মৃত্যুর জন্য আমার এই বড় বড় স্বপ্নই দায়ী। আমি আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। আমাকে শেষ বারের মত দেখতে চাইলে নদীর জলেই খুঁজো। আমার মৃত্যুটা এভাবেও চাইনি। সুইসাইড নোট এসব কথা লিখে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন পিউ কর্মকার নামে এক ছাত্রী।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পিউ বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হন। রাত সাড়ে আটটার দিকে বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সোনাকান্দর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান।

আত্মহত্যার আগে ফেসবুক পোস্টে পিউ কর্মকার লেখেন, ‘গুচ্ছ আমার শেষ ভরসা ছিল। জানিনা কবে রেজাল্ট দেবে। পরীক্ষাও মোটামুটি হইছিল, একটা আশা ছিল। কিন্তু আমার ভাগ্য সেই আশাটাও পূরণ করতে দিলনা। ৫টা অপশন থাকে। তার মধ্যে আমি বায়োলজি আর ইংরেজি এর বৃত্ত ভরাট করে ফেলেছিলাম ভুল করে। আজকে সেটা দেখলাম। কিন্তু আমি উত্তর করছিলাম বাংলা এর। আমার সব স্বপ্ন শেষ। একে একে ঢাবি, রাবি, জাবি থেকে একটু একটুর জন্য ধাক্কা খাই। জানি এটাও আমার চেষ্টা কম ছিল না। সারাদিন রাত এক করে পড়তাম। মা-বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে। আমি কিচ্ছু দিতে পারিনি। দাদার ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমারও স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই যে, ডাক্তার হব। আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল মেডিকেলে ভর্তি এর প্রিপারেশন নেওয়াও শুরু করি কিন্তু মেডিকেলে বসতে পারি না। এটা থেকেও বিশাল একটা ধাক্কা খাই। অনেক ভেঙে পড়ছিলাম তাও হাল ছাড়িনি। এই ভর্তির সময়টা যে কত কষ্ট দিছে আমাকে। এই সব আমি আর নিতে পারছিনা। আমি শুধু একটা আশ্রয় খুঁজতেছিলাম। শেষ আশ্রয় সেটাও শেষ হলো। অনেক মানুষ, অনেক আত্মীয় এর কথা শোনা লাগছে। বাবার একটু ফাইনান্সিয়াল সমস্যা ছিল। এজন্য যে ঢাকা যেতে পড়তে হবে কেন। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম যে পারব। কিন্তু আমি আর পারলাম না। সারাটাদিন ঘরের মধ্যে একা একা বসে থাকি। মানুষের কত ফ্রেন্ড, কত কিছু কিন্তু আমি আমার পাশে কাউকে পাইনি। সব থেকে প্রয়োজন ছিল যাকে, যাকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম তাকেও আমি আমার পাশে পাইনি। হয়তো আমাকে সাপোর্ট করার মত কেউ থাকলে আজকে এই মৃত্যুটা হতো না। সেকেন্ড টাইম প্রিপারেশন নেওয়ারও কোনো মানসিক ও শারীরিক শক্তি নেই। আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেল’

প্রসঙ্গত, পিউ কর্মকার চলতি বছর রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুধবার সকালে রাজবাড়ী পৌর শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন