টুকিটাকি

ফ্যাশনে মোড় ঘুরিয়েছে ‘শয়তানের চোখ’

ঘন নীল রঙের, গোলাকার কাচের একটি বস্তু। যার মাঝখানটা দেখতে অনেকটা চোখের মতো। তবে কি এটি শয়তানের চোখ? ব্যাপারটা হলফ করে বলা মুশকিল! কিন্তু তা নিয়েই বিশ্ব জুড়ে এখন হইচই।

ইনস্টাগ্রামে ‘হ্যাশট্যাগ ইভিল আই’ ব্যবহারের অঙ্ক দেখলে যে কারো চোখই কপালে ওঠার জোগাড়। হলিউডের মডেল, অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ান থেকে বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান, সকলেই মজেছেন এই চোখে। বাদ পড়েননি বলিউড নায়িকা দীপিকা, ক্যাটরিনা, প্রিয়াঙ্কা, শিল্পা শেঠি। অনেকেরই গয়নাতেই ছোঁয়া রয়েছে এই ‘ইভিল আই’-এর।

অভিনয়, শিল্প, সঙ্গীত, ফ্যাশন জগতের তাবড় নক্ষত্রেরা সেই ইভিল আই আঁকা নানা গয়নায় মজেছেন। সারা আলি খানের গলায় দেখা যায় ইভিল আই দেয়া হার, তো অভিষেক বচ্চন আবার ব্রেসলেট পরেন ইভিল আই আঁকা। বাদ যাচ্ছেন না এই তারকাদের অনুগামীরাও। ফলে ঘরে ঘরে ছেয়ে গিয়েছে ‘ইভিল আই’।

বিশ্বের বড় বড় শিল্পপতি থেকে সাধারণ ব্যবসায়ী সবার শরীরেই ইভিল আই। তা দেখে কলেজপড়ুয়া থেকে পাশের ফ্ল্যাটের কিশোরীরাও সেই চিহ্ন দেয়া গয়না খুঁজছেন। গয়নায় ‘ইভিল আই’-এর ব্যবহার শুধুই কি ফ্যাশন ট্রেন্ড? না কি এই বস্তুটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস?

গয়নায় ‘ইভিল আই’ ব্যবহারের হুজুগ খুব বেশি দিনের না হলেও ৫০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি ধারণা এটি। নীলনদের দেশ মানে মিশরীয় সভ্যতায় তার আবির্ভাব। পরে অবশ্য পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়া, লাতিন আমেরিকা হয়ে এক সময়ে ভারতীয় সংস্কৃতিতেও ঢুকে পড়ে এই বিশেষ চোখটি। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর ‘সিম্পোসিয়াম’-এও ‘ইভিল আই’-এর প্রতি মানুষের বিশ্বাস এবং তার ব্যবহারের নানা উল্লেখ পাওয়া যায়। চিনা ‘ফেংশুই’ শাস্ত্রেও এই জিনিসটি বেশ প্রচলিত।

 

শয়তানের-চোখ

গ্রিক পুরাণে বর্ণিত ‘ইভিল আই’-এর আকার ক্যারমের স্ট্রাইকারের চেয়ে খানিক বড়। স্বচ্ছ, নীল রঙের কাচের বস্তুটির একদম মাঝখানে থাকে চোখের মণির মতো কালো রঙের একটি বিন্দু। সেই বিন্দুটিকে ঘিরে রয়েছে আরও দু’টি স্তর। বাইরেটা আকাশি নীল এবং তার পরের অংশটি সাদা। ঘন নীল অংশটির উপর দিকে থাকে ছোট একটি ছিদ্র। সেই ছিদ্র দিয়ে গলানো হয় মোটা সুতো বা দড়ি। অনেকটা হারের সঙ্গে থাকা লকেটের মতোই। ওই সুতো থেকে ঝুলতে থাকে ‘ইভিল আই’।

অন্যের নজর যাতে না লাগে, তা নিশ্চিত করাই এই ‘ইভিল আই’-এর কাজ। নজর কাটানোর জন্য শিশুদের হাত-পায়ে কালো কার, কোমরে কিংবা গলায় জালকাঠি পরানোর যেমন চল ছিল, এটাও ঠিক তেমনই। কুনজর তাড়ানোর প্রাচীন সেই চিহ্নই এখন ফ্যাশনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। হলিউড, বলিউড হয়ে পৌঁছে গিয়েছে টলিপাড়ার তারকাদের কাছেও। গোটা বিশ্ব এখন এই ‘এক চোখে’র দিকে তাকিয়ে।

‘ইভিল আই’ শুধু দরজার কোণেই আটকে থাকেনি। ভৌগোলিক কাঁটাতার, ধর্মীয় রীতি-রেওয়াজ পেরিয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে এটি হয়ে উঠেছে বাঙালির বসার ঘরে কাচের আলমারিতে সাজানো ‘শোপিস’, গাড়ির ‘রিয়ার ভিউ মিরর’-এ ঝুলতে থাকা ‘নজর বাট্টু’, অফিসের ডেস্কে রাখা ‘লাকি চার্ম’। হালে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে গয়নাশিল্পের নকশাও। ব্রেসলেট, হার, অ্যাঙ্কলেট, কানের দুল, আংটি তো বটেই, সঙ্গে ওয়াচ চেন, চাবির রিং সবেতেই ঢুকে পড়েছে ইভিল আই।

 

মায়ানগরী মুম্বাইতে বচ্চন এবং কাপূরদের সম্পর্ক পারবারিক। সেই সূত্র ধরেই প্রতি বছর অভিনেতা রণবীর কাপূরের বোন রিদ্ধিমা কাপূর সাহনি, অভিষেক বচ্চনের হাতে রাখি বাঁধেন। নিজের তৈরি ‘ইভিল আই’ মোটিফ দেয়া রাখি অভিষেকের হাতে পরিয়েছিলেন রিদ্ধিমা। হলিউডের পপ-গায়ক জাস্টিন বিবারের জন্যও ইভিল আই ব্রেসলেটের নকশা এঁকেছিলেন তিনি।

শয়তানে-চোখ,-শাহরুখ,-দীপিকা,-অভিষেক

বিশ্ব জুড়ে একটি চিহ্ন নিয়ে এমন উৎসাহ দেখে নড়েচড়ে বসেছে ‘সোয়ারোভস্‌কি’, ‘শ্যানেল’, ‘পিপা বেলা’-র মতো আন্তর্জাতিক ফ্যাশন সংস্থাগুলি। লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ‘ইভিল আই’ গয়না এ দেশের মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে এনে দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ‘ক্যারেটলেন’, ‘ব্লু স্টোন’, ‘মিয়া’-র মতো শৌখিন গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিও।

 

খুঁজলে  টিপ, কানের দুল, সেফটিপিন-এর পাশাপাশি ‘ইভিল আই’ দেয়া এক জোড়া অ্যাঙ্কলেটও পাওয়া যাবে রাস্তার হকারদের কাছে। হলিউডের তারকাদের পছন্দের ইভিল আই এখন এ ভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে।

‘কুনজর’ থাকুক বা না থাকুক, নতুন ধরনের একটি চিহ্ন তো পাওয়া গিয়েছে। গয়না না কিনলেও কেউ কিনছেন সেই চোখের আকারে তৈরি সুগন্ধি মোমবাতি, তো কেউ কিনছেন টেবিল ক্লথ, কোস্টার, টোট ব্যাগ। আর এ ভাবেই নজর কাড়ছে নজর কাটানোর চিহ্ন।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন