সীমার মাঝে অসীম ‘মা’
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ঠিকই লিখেছিলেন ‘যেখানেতে দেখি যাহা, মা-এর মতন আহা। মার বড়ো কেউ নাই –কেউ নাই কেউ নাই! নত করি বল সবে মা আমার! মা আমার!’ আর সেটাই তো মা ছাড়া আপন আর কে’ই বা আছে।
এক অক্ষরের একটি ছোট্ট শব্দ ‘মা’। অথচ ছোট্ট শব্দটির অর্থ কতোটা অসীম, অদ্বিতীয় তা প্রকাশের ভাষাও এখনো তৈরি হয়নি। যার সাথে কারোর তুলনা চলে না। সীমার মাঝে অসীম হলো ‘মা’। মা মানে মমতা, মা মানে ক্ষমতা, মা মানে নিরাপত্তা, মা মানে নিশ্চয়তা, মা মানে আশ্রয়দাতা, মা মানে সকল আশা, মা মানে এক বুক ভালোবাসা। মা এক বর্ণের এক বিশাল নাম। অস্তিত্বের নিরাপত্তার নাম। সন্তানের জন্য মা শাশ্বত।
আজ পৃথিবীর সকল মা’য়েদের জন্য একটি বিশেষ দিন। দিনটি হলো বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালন করা হয় বিশ্ব মা দিবস। এ হিসাব অনুযায়ী, আজ ১২ মে সারাবিশ্বে পালন করা হচ্ছে মা দিবসটি। দিনটিতে মাকে বিশেষভাবে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জানানোর দিন।
বিশেষ এই দিবসটি কীভাবে এলো তা হয়তো অনেকেরই অজানা। ইতিহাস বলছে, অনেক পথ পেরিয়ে এই দিবসটি নতুন রূপ পেয়েছে। ধারণা করা হয়, মা দিবসের সূচনা প্রাচীন গ্রিসের মাতৃরূপী দেবী সিবেলের এবং প্রাচীন রোমান দেবী জুনোর আরাধনা থেকে।
এছাড়া ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য অনেক আগে থেকেই মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রোববারকে বেছে নিয়েছিলেন। ষোড়শ শতকে এটি ইংল্যান্ডে মাদারিং সানডে বলে পরিচিতি লাভ করে। অনেকেই ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রোববারে পালন করতে শুরু করে।
তবে ইতিহাস বিদদের মতে, জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত "মাদার্স ডে প্রক্লামেশন" বা "মা দিবসের ঘোষণাপত্র" মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পৈশাচিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিজ জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস।
এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান।
মায়ের মৃত্যুর পর আনা মেরি জার্ভিস মায়ের শান্তি কামনায় ও তার সম্মানে সরকারিভাবে মা দিবস পালনের জন্য প্রচারণা চালান। তিন বছর পর ১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালন হয়।
এরপর ১৯১২ সালে এই দিবসটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। এই প্রচার ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায়।
এ প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই প্রতিটি দেশে মায়েদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়। দেশে দেশে পালন করা হয় বিশ্ব মা দিবস।
টিআর/