আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় চেয়ারম্যান আটক

নাটোরে শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় নুরুজ্জামান কালু (৬০) নামের এক ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করেছে পুলিশ।

নুরুজ্জামান কালু নাটোর সদরের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম জাফর বরকত (৫২)। তিনি নাটোরের হয়বতপুর গোলাম ইয়াছিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক।

জানা যায়, গেলো বুধবার (৩ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে হয়বতপুর গোলাম ইয়াছিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু ও তার অনুসারীদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ওই শিক্ষককে মারধর করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক শরিফসহ অন্য শিক্ষকরা জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার মাদ্রাসায় ক্লাস শুরু হয়। দ্বিতীয় ঘণ্টার পর হঠাৎ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের কিছু কর্মী ওই মাদ্রাসায় প্রবেশ করে কমিটি পরিবর্তনে শিক্ষকদের নির্দেশ দেন। এ সময় কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতকে মারধর করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুও উপস্থিত ছিলেন।বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, “আমি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই মাদ্রাসায় জনগণের ক্ষোভ দেখতে পাই। সেখানে গিয়ে কথা বলতে চাইলে ওই শিক্ষক চেয়ার ছুড়ে মারেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে আমার সঙ্গে থাকা লোকজন এবং স্থানীয় কিছু লোক তাকে মারধর করেছে।”এ ঘটনায় বুধবার নুরুজ্জামান কালুসহ সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী জাফর বরকত।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আজ (৩ আগস্ট) সকালে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান এবং তার ছেলে মো. জয়সহ প্রায় ১৫ জন ওই মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে খুঁজতে থাকেন। ওই সময় অধ্যক্ষ বাইরে থাকায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ করে গালিগালাজ করেন। এ সময় মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জাফর বরকত তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করেন। এতে তারা আরও ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় চেয়ারম্যানের সহযোগীরা লাঠি দিয়ে ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করেন।

আহত শিক্ষক মো. জাফর বরকত জানান, তিনি ওই মাদ্রাসায় ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। সম্প্রতি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি পরিবর্তন করার জন্য চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান অধ্যক্ষকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। একই উদ্দেশ্যে তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে সকালে মাদ্রাসায় যান। অধ্যক্ষকে না পেয়ে তিনি অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। বিরক্ত হয়ে তিনি গালি দিতে নিষেধ করেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইউপি ভবনে আটকে রাখেন।ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ও তার সহযোগীরা গাঢাকা দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাতে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।এ ব্যাপারে নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ জানান, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক জাফর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে নাটোর থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই ঘটনায় (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন