ইরানে কে হতে চলেছেন খামেনির উত্তরসূরি?
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসির নিহতের ঘটনায় অস্থির অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য। ক্ষমতায় আসার পর কঠোর হাতে দেশ সামলানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে বেশ শক্তিশালী প্রভাব বলয় সৃষ্টি করেছিলেন রাইসি। হামাস, হুথি ও হিজবুল্লাহসহ প্রক্সি যোদ্ধাদের কাছেও রাইসি ছিলেন-তুমুল জনপ্রিয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী এই নেতাকে হারানোর পর ইরানের ভবিষ্যৎ কী? ৮৫ বছর বয়সী খামেনির মৃত্যুরে পর কে হচ্ছেন তার উত্তরসূরি? এটাই এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। একই সঙ্গে টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড।
ইরানের যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকে দেশটির সবোর্চ্চ নেতার হাতে। শুধু তাই নয় সেনাবাহিনী, ইসলামী বিপ্লবী গার্ড-আইআরজিসি, পররাষ্ট্রনীতি সব সেক্টরেই সর্বোচ্চ নেতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত। সম্প্রতি ইসরায়েলের ড্রোন ও মিসাইল হামলাও দেশটির শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির আদেশেই হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাইসি কিন্তু সংঘর্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। তাই খামেনির আসনে ভবিষ্যতে কে আসবেন বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইরানর উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতার চূড়ার খুব কাছাকাছি অবস্থানে ছিলো ইবরাহিম রাইসি। ৮৫ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে তাকে ভাবা হচ্ছিলো। খামেনি দীর্ঘদিন ধরে রাইসিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগ ও প্রেসিডেন্সি। এটি সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তাকে গড়ে ওঠার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত ছিলো বলে বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা। তবে রাইসির আকস্মিক মৃত্যুতে পাল্টে গেছে সব হিসাবনিকাশ।
বেঁচে থাকলে রাইসি শীর্ষ নেতা হতে পারতেন কিনা তা নিয়ে অবশ্য মতবিরোধও রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ড.আলি ভায়েজের মতে, ইরানের দুর্বোধ্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাইসি ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ নেতা হতে পারতেন কিনা তা শীর্ষস্থানীয় অল্প কয়েকজন নেতা ছাড়া কারও জানার কথা নয়। কিন্তু তাকে যদি এই দায়িত্বের জন্য বিবেচনা করা হয়ে থাকে তাহলে তার মৃত্যু খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে বড় প্রশ্ন হাজির করেছে।
রাইসি বাদে সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসূরি হিসেবে আলোচনায় যার নাম রয়েছে তিনি হলেন খামেনির ছেলে মোজতবা। ৫৪ বছর বয়সী মোজতবাকে প্রকাশ্যে খুব দেখা যায় না। তবে পর্দার আড়ালে তিনি খুব প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। আয়াতুল্লাহর আলী খামেনীর ছয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র মোজতবা খামেনি । তিনি একজন রক্ষণশীল হার্ড-লাইনার হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক কৌশলে তুখোড় পারদর্শী মোজতবার রয়েছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর উপর বড় প্রভাব। এছাড়া, ইরানের গোয়েন্দা বাহিনী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে মোজতবা খামেনির উচ্চ-স্তরের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তবে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন,খামেনি তার ছেলেকে উত্তরসূরী করবেন না। কারণ নিজের ছেলেকে উত্তরসূরি করলে তাতে মনে হতে পারে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনে গণতন্ত্র বজায় নেই এবং এখানে বংশানুক্রমিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ইরানের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে পারিবারিক শাসন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। শাহের শাসনকে উৎখাত করার সময় ইসলামি বিপ্লবীরা পারিবারিক শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন।
তারপরও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, ইরানের বর্তমান প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন ও জটিল। এমতাবস্থায় রাইসির মৃত্যুতে খামেনির উত্তরসূরি হওয়ার পাশার দান উল্টে গেছে। মনোযোগ এখন খামেনিপুত্র মোজতবার ওপর ফিরে এসেছে। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্স
এমআর//