ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব, উপকূলের অনেক গ্রাম প্লাবিত
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শেষ করেছে। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি প্রবল থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড়টির পুরো প্রভাব শেষ হতে আরও পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাগতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড়টি কতটা তাণ্ডব চালিয়েছে রাতে তেমনটা বোঝা না গেলেও সকাল হওয়ার পর আস্তে আস্তে ঝড়টির তাণ্ডবলীলা স্পষ্ট হচ্ছে। উপকূলের বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব খবর আসছে তাতে উপকূলজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডবই চালিয়েছে রেমাল।
রোববার রাত পৌনে নয়টার দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে। এ সময় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়টি। সঙ্গে উঁচু জলোচ্ছ্বাস হলে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপসানালয়, মাছের ঘের ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া এবং মহেশখালী উপজেলার সিকদার পাড়াসহ জেলার অন্তত ১০টি গ্রামে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে গ্রামীণ সড়ক ও বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে।
বাগেরহাটে গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পানিতে ডুবেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আগাম প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি কম হলেও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গবাদি পশু, মাছের ঘের ও ফসলি ক্ষেত। বাড়িঘর ও জনপদ ভাসছে নোনাপানিতে। ঝড়ে উপড়ে গেছে গাছপালা।
বরগুনার প্রধান তিনটি নদী বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উচ্চ জোয়ারের চাপে বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। এছাড়া জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে বরগুনার নিম্নাঞ্চল। বরগুনার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর নদনদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ায় কোথাও ভাঙা বাঁধ ভেঙে, কোথাও বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। প্লাবিত হয়েছে নিচু এলাকাগুলোও। নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধ। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা, চিনাবুনিয়া ও গরুভাঙা গ্রাম প্লাবিত হয়। অন্যদিকে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা গ্রামেও অনেক আগ থেকেই ভেঙে থাকা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে লোকালয়।
জেএইচ