বুক চিতিয়ে এবারও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করলো সুন্দরবন
বাংলাদেশ যেসব ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে, সুন্দরবনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করার আগেই তার বেশিরভাগেরই গতি কমে গেছে। ফলে ঘূর্ণিঝড়গুলোর বেশিরভাগই ভয়ংকর তাণ্ডব চালাতে পারেনি। তাণ্ডব চালানোর আগেই দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে দেশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কম। এবারও সুন্দরবন প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলা করেছে বুক চিতিয়ে, সাহসের সঙ্গে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বায়ান্ন টিভিকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যতগুলো ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ আঘাত হেনেছে তার মধ্যে সিডর ও আইলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে যে গতিতে ওই ঘূর্ণিঝড় দুটি এগোচ্ছিলো, সুন্দরবনে বাধা না পেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিনগুণেরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা ছিলো। সুন্দরবনের বাধা পেয়েই ২০০৭ সালে সিডরের গতিবেগ কমে গিয়ে ঘণ্টায় ২২৩ কি.মি. বেগে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানে। বাংলাদেশের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ সুন্দরবনের বাধা পেয়েই সিডরের গতিবেগ প্রায় অর্ধেক কমে যায়। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৭ সালে সিডরের পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়গুলোকে 'সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম' বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ছোবল থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় সুন্দরবন যে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পরিবেশবিদ ড. একিউএম মাহবুব গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মনে করেন আপনার বাড়ির সামনে একটা দেয়াল আছে। সেটার কারণে বন্যার পানি, দমকা বাতাস আপনার ঘরে ঢুকতে পারবে না। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের জন্য সুন্দরবন ঠিক সেই দেয়ালের কাজটাই করে।’
২০০৯ সালের ২৫শে মে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইলা। যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সুন্দরবন বুক চিতিয়ে সামনে এসে দাঁড়ানোর কারণে ধেয়ে আসা গতিবেগ কয়ে হয়ে যায় ঘণ্টায় ৭০-৯০ কি.মি.। ফলে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সুন্দরবন শুধু এবার না এর আগেও অসংখ্য ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। সুন্দরবন না থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়তো।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল সাতক্ষীরার উপকূল এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালালেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। এদিকে, এবারও ঢাল হয়ে খুলনা অঞ্চলকে আরও ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই বন।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল জেলাজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। এর প্রভাবে অনেক গাছপালা উপড়ে গেছে। জোয়ারে মাছের ঘের ভেসে গেছে। তবে সুন্দরবনের এবারও রক্ষা করেছে। বাতাসের গতিবেগ অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কবল থেকে সাতক্ষীরার উপকূল এখন প্রায় বিপদমুক্ত- এমনই তথ্য নিশ্চিত করেছে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের একটি সূত্র।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সূত্রটি জানায়, শহর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ঝোড়ো বাতাসের গতিবেগ মাঝে মাঝে এতো বেশি যে, ঘর থেকে বাইরে কোনো স্থানে যাওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিণ্ন জেলায় দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ বৃষ্টিপাত সোমবার সারাদিন থাকতে পারে। এক পূর্বাভাসে এমনই তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় স্থান থেকে ঝোড়ো বাতাস ও বর্ষণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, অবিরাম বৃষ্টি ঝরিয়ে সোমবার সকালে দূর্বল হবে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। তবে এর প্রভাবে রোববার রাত থেকে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার(২৭ মে) সারা দেশেই বৃষ্টি হবে। এমনকি মঙ্গলবারও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
আবহাওয়া অধিদফতরের সম্ভাব্য গতিপথ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় রেমালের ঢাকা হয়ে সিলেটের দিকে চলে যাওয়ার কথা।