বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যে তোলপাড় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে

বাংলাদেশে একটি দেশ বিমান ঘাঁটি বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে এবং ওই দেশটি  মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে একটি খ্রিস্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত করছে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক এমন মন্তব্যে তোলপাড় চলছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ জুন) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। ব্রিফিংয়ে উঠে আসে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের মামলার প্রসঙ্গও।

নিয়মিত বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কাছে মুশফিকুল ফজল আনসারী নামে এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন যে একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি তাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, একটি বিদেশী রাষ্ট্রকে এখানে বিমানঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দিলে তিনি কোনো চাপ ছাড়াই ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।

শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশকে আরেকটি পূর্ব তিমুরে পরিণত করার এবং বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি তৈরি করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অংশ নিয়ে একটি খ্রিষ্টান দেশ বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে।  শেখ হাসিনার এসব অভিযোগের তীর কী যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ছুঁড়েছেন? কেননা  বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, আইনের শাসন এবং দুর্নীতি দমন নিয়ে অব্যাহতভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন আপনারা।

জবাবে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘এই মন্তব্যগুলো কাকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমি ঠিক নিশ্চিত নই। তবে এসব যদি প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বলা হয় তাহলে আমি বলব, মন্তব্যগুলো সঠিক নয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তরের মুখপাত্রের কাছে ওই সাংবাদিক আরেকটি প্রশ্ন করেন। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওই সাংবাদিকের প্রশ্নটি ছিলো,

রোববার আদালত কক্ষের ভেতরে আসামিদের অন্ধকার ও লোহার খাঁচার মতো ঘরে প্রবেশ করে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, তিনি তার অভিশপ্ত জীবনের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে রয়েছেন। একইভাবে, গণতন্ত্র, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি এবং সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির কারণে দেশের লাখো জনগণ তাদের অভিশপ্ত জীবনের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে রয়েছেন। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান ও পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর সরকারকে জবাবদিহি করার জন্য এই পদক্ষেপকে যথেষ্ট বলে কী আপনি মনে করেন? নাকি আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের সাথে সংহতি প্রদর্শনের জন্য আরও পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করবেন?

প্রশ্নের জবাবে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মুখপাত্র মিলার বলেন, ‘আমরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি যে, এই মামলাগুলোর মাধ্যমে ড. ইউনূসকে হয়রানি ও ভয় দেখানোর জন্য বাংলাদেশের শ্রম আইনের অপব্যবহার হতে পারে। আমরা আরও উদ্বিগ্ন যে শ্রম এবং দুর্নীতিবিরোধী আইনের অপব্যবহার আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগে(এফডিআই) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ম্যাথিউ মিলার বলেন, আপিল প্রক্রিয়া চলতে থাকায় আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ড. ইউনূসের জন্য একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করতে থাকব। নতুন কোনও পদক্ষেপের ব্যাপারে আগাম কিছু বলতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাবধীন ১৪ দলের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশের একটা অংশ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর চক্রান্ত চলছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মতো বাংলাদেশের একটা অংশ চট্টগ্রাম, মিয়ানমার নিয়ে খ্রিস্টান স্টেট (রাষ্ট্র) বানাবে। বে অফ বেঙ্গলে (বঙ্গপোসাগরে) একটা ঘাঁটি করবে। তাঁর কারণ হচ্ছে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবসা বাণিজ্য চলে, আর এই জায়াগটাতে কোনো কন্ট্রোভার্সি নাই, কারও কোনো দ্বন্দ্ব নাই। বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগরের ভেতরেই একটি উপসাগর, এটা প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহার হচ্ছে। এই জায়গাটার ওপর অনেকের নজর । এটা আমি হতে দিচ্ছি না, এটাও আমার একটা অপরাধ।’

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন