ইমরান খান গ্রেপ্তার হতে পারে
আদালত অবমাননার দায়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের ছয় মাসের জেল হতে পারে। বললেন পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের হাই কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি শাইক উসমানি।
গেলো সোমবার পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিচারপতি শাইক বলেন, দোষী সাব্যস্ত হলে ইমরান খান আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতাও হারাবেন। ইমরান খানের আদালত অবমাননার মামলাটি অন্যান্য আদালত অবমাননার মামলার চেয়ে ভিন্ন। কারণ তিনি একজন বিচারকের নাম উল্লেখ করেছেন এবং ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন।
সাবেক বিচারপতি উসমানি বলেছেন, কোনও আদালত যদি কারও বিরুদ্ধে রায় দেন, তাহলে তিনি রায় নিয়ে সমালোচনা করতে পারেন, বিচারককে নিয়ে নয়। পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান নিজেকে বিপদের মাঝে দেখতে পাচ্ছেন। ইমরান খান উত্তেজনার বশে বড় একটি ভুল করে ফেলেছেন।
বিচারপতি শাইক উসমানি বলেন, ইমরান খান ক্ষমা চাইলেও রক্ষা পাবেন বলে মনে হয় না।
জিও নিউজের একই অনুষ্ঠানে পিপিপির নেতা কামার জামান কাইরাও ইমরান খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তাকে হুমকির দায়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আদালতের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আইজি এবং ডিআইজির পদ কি ম্যাজিস্ট্রেটের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ?
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা তালাল চৌধুরী বলেন, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারই সরকারের নিছক কোনও ইচ্ছা নয়, তবে এটা দায়িত্ব। সরকারি কর্মকর্তাদের রক্ষা করাও সরকারের দায়িত্ব। পিএমএল-এনের এই নেতা বলেন, সরকার যখন খুশি ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
গেলো শনিবার ইসলামাবাদের সমাবেশে এক অতিরিক্ত দায়রা জজ এবং জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের হুমকি দেয়ার অভিযোগে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ইমরান খানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সাত নম্বর ধারা অনুযায়ী ইসলামাবাদের মারগাল্লা থানায় ইমরানের বিরুদ্ধে এই এফআইআর দায়ের করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট আলী জাভেদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, পিটিআই চেয়ারম্যান অতিরিক্ত দায়রা জজ জেবা চৌধুরী এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছেন ইমরান খান। যেটি এক ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা। এই হুমকির প্রধান লক্ষ্য ছিল পুলিশ কর্মকর্তা এবং বিচার বিভাগকে তাদের আইনি দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া।
এফআইআরে বলা হয়েছে, ইমরান খানের বক্তৃতার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মাঝে অশান্তি ও সন্ত্রাস ছড়ানো।
ইসলামাবাদের এফ-৯ পার্কে জনসমাবেশে দেয়া ভাষণে ইমরান খান সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ইসলামাবাদ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি), উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে নেবেন। পিটিআইয়ের নেতা শাহবাজ গিলকে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও হুমকি দেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা আইজি এবং ডিআইজিকে ছাড়বো না।
সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ জেবা চৌধুরীর নাম উল্লেখ করেন। গেলো সপ্তাহে পিটিআইয়ের নেতা শাহবাজ গিলকে গ্রেপ্তারের পর দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন তিনি। ইমরান খান এই বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার বিরুদ্ধেও মামলা হবে, প্রস্তুতি নিন।
কারাবন্দী পিটিআই নেতা শাহবাজ গিলের সমর্থনে ইসলামাবাদের জিরো পয়েন্ট থেকে এফ-৯ পার্কে দলীয় এক র্যালিতে নেতৃত্ব দেয়ার সময় এসব মন্তব্য করেন ইমরান খান। পিটিআই বলছে, পুলিশি জিম্মায় শাহবাজ গিলের ওপর ‘ভয়াবহ নির্যাতন’চালানো হয়েছে।
ইমরান খান আরও বলেন, শাহবাজ গিলের বিরুদ্ধে যদি মামলা দায়ের হতে পারে, তাহলে ফজলুর রেহমান, নওয়াজ শরিফ ও রানা সানাউল্লাহকেও বিচারিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করতে হবে। তিনি বলেন, গিলের ওপর নির্যাতন চালানোর মাধ্যমে তারা (জোট সরকার) আমাদের ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে।