নিয়মবহির্ভূতভাবে কুবিতে রেজিস্ট্রার নিয়োগের অভিযোগ
নিয়মের ব্যত্যয় করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব প্রদানের করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা, সরকারি চাকরি বিধিনাবলী, জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ এর মধ্যে কোনটিই মানেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তি জুনিয়র হওয়া সত্ত্বে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের পছন্দের ব্যক্তি হওয়ায় নিয়মের ব্যতয় করে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরের পদত্যাগের ৫ মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়। বুধবার (২৪ আগস্ট) নতুন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দেওয়া হয় ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত স্থায়ী রেজিস্ট্রার থাকলেও তাকে দায়িত্ব না দিয়ে এক জুনিয়র ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেওয়ায় উঠেছে নানা প্রশ্ন।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের জৈষ্ঠ্যতার ক্রমানুসারে নতুন দায়িত্ব পাওয়া রেজিস্ট্রার আমিরুল হকের ক্রম ১৩। তার সিনিয়র ১২ জন কর্মকর্তা থাকলেও তিনি উপাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় সিনিয়রদের দায়িত্ব না দিয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়রকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এনিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কোন দপ্তরের প্রধান নিয়োগ করার ক্ষেত্রে জৈষ্ঠ্যতা বিবেচনা করা জরুরি। তখন অসুবিধা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকেনা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পূর্ণকালীন নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু ২০০৭ সালে স্থায়ী রেজিস্ট্রারের হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মুজিবুর রহমান মজুমদারকে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পদসহ লাইব্রেরির দায়িত্বে রেখেই এক জুনিয়র কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব।
এবিষয়ে মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, এ পদে আমি স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত। এখন উপাচার্য মহোদয় নতুন একজন কে দায়িত্ব দিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাইনা। এগুলা নিয়ে কাজ করতে করতে আমি ক্লান্ত। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় ভালভাবে চলুক।
এদিকে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিষয়ে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, আমাদের আহ্বান ছিল রেজিস্ট্রার দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর প্রধানের পদে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দেওয়া। আমরা আগে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়েছি, আবার রিমাইন্ডার দিব। আর একটি নীতিমালা তৈরি করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিতে হবে।
এদিকে রেজিস্ট্রার পদটি শূন্য না হওয়ার পরও ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি চাকরি বিধানবলী অনুযায়ী শূন্য পদে নিম্নপদধারী কাউকে দায়িত্ব দিতে হলে সেখানে চলতি দায়িত্ব দিতে হয়। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের শাখা (বিধি-১) এর স্মারক নং সম(বিধি-১/১১/৯২-৩০(১৫০) এ চলতি দায়িত্ব/অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত নিয়মাবলী অনুযায়ী শূন্য পদে যথাক্রমে সমপদধারীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং নিম্নপদধারীকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করিয়া থাকেন। কিন্তু নিম্নপদধারী এক ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় নিয়মের ব্যতয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষুদে বার্তায় বলেন, স্থায়ী রেজিস্ট্রার পদে থাকা ব্যক্তিকে তার পদসহ লাইব্রেরিতে বদলি করে সাবেক প্রশাসন। সেসময় অন্য ডেপুটি রেজিস্ট্রারদের কাছ থেকে নিয়োগ না দিয়ে পদটি একজন শিক্ষাবিদকে দেয়া হয়েছিল। যদিও এটি একজন কর্মকর্তার পদ। তাই আমাদের প্রশাসন রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালনের জন্য একজন কর্মকর্তাকে বেছে নিয়েছে। যদিও তিনজন ডেপুটিই যোগ্য, তবে আমরা তাদের সবাইকে রেজিস্ট্রার হিসাবে কাজ করতে বলতে পারি না যখন একটি মাত্র পদ থাকে।
নিম্নপদধারীকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দেওয়ার বিষয়ে জানতে উপাচার্যকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলে তিনি প্রতিত্তুর দেয়নি।