‘বাংলাদেশি রোগীদের ই-মেডিকেল ভিসা ও রংপুরে সহকারী হাইকমিশন’
ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি রোগীদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি শিগগিরই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরে সহকারী হাইকমিশন খোলার ঘোষণাও দেন তিনি।
শনিবার(২২ জুন) দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এসব কথা বলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য ভারতে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা চালু করবে ভারত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের সুবিধার্থে রংপুরে নতুন সহকারী হাই কমিশন খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
গত এক বছরে দুই নেতার মধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ এই সফরটির বিশেষত্ব হল- এনডিএ(বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট দল- ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স) সরকারের তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ভারতের প্রথম রাষ্ট্রীয় অতিথি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসময় আরও বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা ১০ বার বৈঠক করেছি, কিন্তু আজকের বৈঠকটি বিশেষ; কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রথম রাষ্ট্রীয় অতিথি। আমাদের 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতি, অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি, ভিশন সাগর এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর আমরা বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। ‘
বার্তা সংস্থা এএনআই লিখেছে, শনিবার রাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠেয় ম্যাচের জন্য দুই দলকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “আজকের ম্যাচের জন্য আমি ভারত ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শুভকামনা জানাচ্ছি।”
ঢাকা-দিল্লির দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশ ভারতীয় রুপিতে লেনদেন শুরু করেছে। ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘দুই দেশ পদ্মা চুক্তি নবায়নে কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের তিস্তা নদীর সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা পরিদর্শনের জন্যও (ভারতের) একটি কারিগরি দল বাংলাদেশ সফর করবে। ’
আগরতলা দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ষষ্ঠ রেলপথ চালুর কথা উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুলনা-মোংলা বন্দর দিয়ে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে কার্গো সার্ভিস শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ভারতীয় রুপির বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা (পদ্মা) নদীর উপর দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম রিভার ক্রুজ সম্পন্ন হয়েছে। ’
তিনি এসময় আরও বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম আন্তঃসীমান্ত মৈত্রী পাইপলাইন সম্পন্ন হয়েছে। ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি আঞ্চলিক সহযোগিতার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত ও দিপক্ষীয় বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১০টি সমঝোতা স্মারক ও নথি সই হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই, তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়নে সই হয়।
এছাড়া, ভবিষ্যৎ কাজের ক্ষেত্র হিসেবে যৌথ কার্যক্রম হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল অংশীদারিত্বের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সবুজ অংশীদারিত্বের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক নথি সই হয়।
এর আগে, শনিবার সকালে দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান নরেন্দ্র মোদি। সেখানে শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর চৌকস একটি দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে আজই ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গতকাল শুক্রবার দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমআর