আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ভূয়া সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজীর অভিযোগ উঠেছে। প্রতারক আনোয়ার হোসেন সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষেকে জিম্মি করে মোটা দাগে অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি জানতে পেরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার রাজু মোস্তাফিজ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। জেলার এক শ্রেণির সাংবাদিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক পরিচয়ে দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে জোড়পূর্বক অর্থগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রতারক ব্যক্তিদেরও গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার হুচারবালা গ্রামের আব্দুস ছালামের পূত্র আনোয়ার হোসেন এসএসসিতে কয়েকবার ফেল করে উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর এলাকায় এসে শুরু করেন দালালীর কাজ। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেবার নাম করে গ্রামের সহজ সরল মানুষকে প্রতারণার ফাঁদের ফেলে নেন মোটা অংকের টাকা। এভাবে বেশ কয়েকজন মানুষের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে চাকুরী দিতে না পারলে লোকজন তার বাড়ীতে এসে টাকা ফেরতের জন্য চাপ দেয়া শুরু করে। পরে পাওনাদারদের চাপ থেকে বাঁচতে ঢাকায় গিয়ে কিছুদিন আত্মগোপন করেন। এরপর নিজেকে বাঁচাতে কৌশল পাল্টিয়ে অর্থের বিনিময়ে ঢাকা থেকে সাংবাদিকের কার্ড সংগ্রহ করেন তিনি।

এসময় তার সাথে যুক্ত হয় একই এলাকার জরিপ উদ্দিনের ছেলে লুৎফর রহমান লিটন, আর্ম পুলিশ থেকে বরখাস্তকৃত তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিমছাট গোপালপুর গ্রামের মৃত: তছলিমের ছেলে মোখলেছুর রহমান, কলেজপাড়া দেওয়ানের খামার গ্রামের চলটা বাবলু ওরফে  আক্তারুজ্জামান এবং সরকারপাড়া ছাটগোপালপুর কালাচান মোড়ের কথিত মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান আলক্তগীণ সরকার। এই কয়েকজন মিলে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব নামে একটি সংগঠনের শাখা এনে নিজেদের সাংবাদিক হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে শুরু করেন অপসাংবাদিকতা।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ বাবদ আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়ন থেকে ৭০-৮০জনের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ, স্থানীয় বেসরকারি এনজিও মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সংস্থার সিএলপি প্রকল্পের শতাধিক ব্যক্তিকে গরু বিতরণের সময় কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ, স্থানীয় সুলতান মোল্লার মেয়ের জামাতাকে চাকুরী দেয়ার নাম করে ২লক্ষ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এসব অপকর্ম করার সময় তারা গ্রামে গ্রামে দলবেঁধে গিয়ে কখনো সাংবাদিক, কখনো এনজিও’র কর্মকর্তা, কখনোবা প্রশাসনের বস সেজে প্রতারণা ও চাঁদাবাজীতে জড়িয়ে পরে। পাওনাদাররা টাকা চাইতে আসলে তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে আমরা সাংবাদিক। তোদের নামে থানায় রিপোর্ট করে পুলিশে ধরিয়ে দিবো। গ্রামের সাধারণ মানুষ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ভয়ে আর তাদেরকে ঘাটাতে আসে না।

এদিকে সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাবের সিনিয়র কয়েকজন সাংবাদিক তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা ভূরুঙ্গামারী থেকে প্রকাশিত এশিয়ান বাংলা নিউজ এর সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা স্ট্যাটাস ও ভুয়া সংবাদ প্রচার করে। এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে গত ১৪মার্চ উল্লেখিত ৫ ব্যক্তির নামে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়। মামলা নং-৪৮২।

এছাড়াও সুলতান মোল্লা বেশ কয়েকবার চাপ দিয়ে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা আদায় করলেও বাকী অর্থ না দেয়ায় আনোয়ারের নামে কুড়িগ্রাম আদালতে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুলতান মোল্লার নামে বিভিন্ন কুৎসা রটিয়ে অনলাইন পত্রিকা ও ফেসবুকে খবর প্রকাশ করে আনোয়ার। প্রায় মাস খানেক পুর্বে আনোয়ারকে পাটেশ্বরী বাজারে একটি বাড়ীতে খাটের নীচে পলাতক অবস্থায় উদ্ধার করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে সোনাহাট স্থলবন্দর ট্রাক ও ট্যাংকলড়ী সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান রতনের জামিনে ৬০ হাজার টাকা প্রদানের কথা দিলে এসআই আতাউর রহমানের মধ্যস্থতায় আপোষ মীমাংসা করা হয়।

সর্বশেষ আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়নে ৭০-৮০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরকারি ঘর না দেয়ায় চেয়ারম্যান জাবেদ মন্ডলের কাছে আনোয়ারের সহযোগী লুৎফর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় প্রতারিতরা। জামিনদার আনোয়ার হোসেন টাকা ফেরৎ দিবে মর্মে সময় নেয়। কিন্তু পরে ফিরে গিয়ে নামসর্বস্ব বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন নিউজপোর্টাল ও ইউটিউব চ্যানেলে চেয়ারম্যান জাবেদ মন্ডলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় ও অপপ্রচার শুরু করে। চেয়ারম্যান আনোয়ারকে প্রতিবাদ জানালে আনোয়ার দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে উল্টো হুকমী-ধামকী ও ভয়ভীতি দেখায়।

বিষয়টি কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও জনকণ্ঠ পত্রিকার কুড়িগ্রাম স্টাফ রিপোর্টার রাজু মোস্তাফিজ’র নজরে আসলে তিনি গেলো ৩০ আগস্ট আনোয়ার হোসেনের নামে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে ভূরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি জানান, উক্ত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন