আন্তর্জাতিক

একসঙ্গে স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করলেন দম্পত্তি

পৃথিবীতে অনেক দম্পত্তিই আছেন যারা সহমরণের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতি নিয়ত প্রার্থণা করেন। কিন্তু ভাগ্য যদি সহায় না হয় তবে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। পৃথিবীর বুকে এমন একটি দেশ আছে যেখানে স্বেচ্ছা মৃত্যু একটি বৈধ পন্থা। যদিও ঘটনাটি বিরল। তবে ইদানিং এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন অনেক দম্পত্তিই।

ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে রয়েছে এই সুযোগ।

দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে একে অপরের সঙ্গে সংসার করেন জ্যান (৭০) এবং ইলস (৭১)। চলতি বছরের জুনের শুরুতে একসঙ্গে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেন এ দম্পত্তি।

কিন্তু কেন তারা মৃত্যুকে বেছে নিলেন, জীবনের শেষ বেলায় গণমাধ্যমকে জানিয়ে গেছেন এ দম্পত্তি। মৃত্যুর তিনদিন আগে তারা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির লিন্ডা প্রেসলির সঙ্গে কথা বলেছেন।

ওই দম্পত্তি জানিয়েছেন, দীর্ঘ পাঁচ দশক দু’জন একসঙ্গে ছিলেন। তারা তাদের সংসার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন নৌকায়। আর জীবনের শেষ ভাগে এসে একটি ভ্যানে থাকতেন। কারণ— তাদের ইটপাথরের বাড়িতে থাকতে মন চাইত না। যেহেতু নৌকায় থাকতেন তাই নৌকা দিয়ে পরিবহণের ব্যবসায়ও নেমেছিলেন স্বামী জ্যান।

কিন্তু ভারী কাজ করতে করতে জ্যানের একটা সময় পিঠের ব্যথার সৃষ্টি হয়, যা তাকে পুরো জীবনজুড়ে কষ্ট দিয়েছে। ২০০৩ সালে এই ব্যথার জন্য একটি অস্ত্রোপচারও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় তিনি আর বাঁচতে চাইছিলেন না।

স্বেচ্ছা-মৃত্যু,-নেদারল্যান্ডস

জ্যান জানিয়েছেন, তার অসুস্থতার মধ্যেই ২০২২ সালে তার স্ত্রীর মস্তিস্কের কঠিন অসুখ ‘স্মৃতিভ্রমের’ সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে তার সেরে উঠার কোনও সম্ভাবনা ছিল না।

আর তার স্ত্রী ইলসের স্মৃতিভ্রমের সমস্যা দেখা দেয়ার পরই একসঙ্গে দু’জন মৃত্যুবরণের সিদ্ধান্ত নেন। এ ব্যাপারে নিজেদের একমাত্র ছেলের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। এরপর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জুনে তারা মৃত্যুবরণ করেন।

বিবিসি জানিয়েছে, স্বেচ্ছা মৃত্যুতে তাদের সহযোগিতা করেন দু’জন চিকিৎসক। মৃত্যুর জন্য তাদের দু’জনকে দেয়া হয় প্রাণনাশী ওষুধ।

জ্যান এবং ইলসের প্রথম দেখা হয় কিন্ডারগার্টেনে। জ্যান একসময় নেদারল্যান্ডসের জাতীয় যুব দলের হয়ে হকি খেলেন। পরে ক্রীড়া প্রশিক্ষকও হন। আর ইলস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তবে পানি, নৌকা এবং পাল তোলার প্রতি তাদের ভালোবাসা ছিল অনেক।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন