ওজন কমাতে সাঁতার যেভাবে সাহায্য করে
সচেতন ব্যক্তিরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন সব সময়। এ জন্য জিম বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজই প্রথম পছন্দ থাকে। তবে ওজন কমাতে সাঁতার কাটাও কিন্তু খুব ভালো একটি ব্যায়াম। ব্যায়াম বিষয়ক ওয়েবসাইট আইবডিফিট ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্কলিন আন্টোয়ানের মতে, ‘সাঁতার ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কয়েকটি উপায়ের একটি। দৌড়ানোর মাধ্যমে যতটা ওজন ঝরানো যায়, সাঁতারের মাধ্যমেও ঠিক ততটাই ওজন ঝরানো সম্ভব। যাদের পেশিতে কিংবা জয়েন্টে সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।’ চলুন জেনে নেই, ওজন কমাতে সাঁতার কীভাবে সাহায্য করে?
ওজন কমাতে সাঁতার কীভাবে সাহায্য করে?
১. ব্রেকফাস্টের আগে সাঁতার
সকালবেলা আগে হাঁটতে যাওয়া সহজ হলেও সাঁতার কাটা কিছুটা কঠিন। তবে যদি সুযোগ থাকে তবে একদম হাতছাড়া করা উচিত নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে সাঁতরে আসতে পারলে আপনার শরীরের জমে থাকা ফ্যাট খুব সহজেই শক্তিতে পরিণত হবে। যেহেতু সাঁতারে বডি মুভমেন্ট খুব বেশি, তাই জমে থাকা মেদভুঁড়ি কমাতে সকালে সাঁতার কাটা খুবই ভালো একটি উপায়। আর ব্যায়ামের ক্ষেত্রে তো সাঁতার কেবল কার্ডিও না, বরং পুরো শরীরেই দারুণ প্রভাব ফেলে।
২. সাঁতার হোক দ্রুত আর জোরালো
সাঁতার শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি খরচ হতে থাকে। তবে এটি যখন অভ্যাস হয়ে যাবে, তখনই আবার ক্যালোরি খরচ হওয়ার মাত্রা কমে আসতে শুরু করবে। এক্ষেত্রে সমাধান কী? অবশ্যই সাঁতার আরো বেশি দ্রুতগতির করে তোলা। সেইসঙ্গে সাঁতারের সময় হাত পা ছোঁড়াও অনেক বেশি বাড়াতে হবে। গবেষণা মতে, সাঁতারের মাধ্যমে ওজন ঝরাতে চাইলে হার্টবিট হতে হবে আপনার মোট হার্টরেট সক্ষমতার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। আর নিজের হার্টরেটও আপনার নিজেরই নির্ণয় করতে হবে। ২২০ থেকে আপনার বয়স বিয়োগ করলেই বুঝতে পারবেন আপনার সর্বোচ্চ হার্টরেট কতো।
৩. সাঁতার সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন
সাঁতার মানেই ফ্রি-স্টাইল। নিজের মতো করে পানিতে সময় কাটানো। তবে সাঁতার অনেক রকমের হতে পারে। ব্যাকস্ট্রোক, বাটারফ্লাই, সাইডস্ট্রোক, ব্রেস্টস্ট্রোক ইত্যাদি। এগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে পানিতে নামলে সাঁতার কাটাতেও ভিন্নতা আসবে। নতুন কাজে যেমন ভালো লাগে, তেমনই সাঁতার কাটতেও তখন ভালো লাগবে।
৪. ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সাঁতার
শুধু সাঁতারে ভিন্নতা না এনে চেষ্টা করুন সময়েও কিছুটা পরিবর্তন আনার। একই সময়ে, একই গতিতে নিয়মিত সাঁতার কাটলে সব সময় ফল ভালো নাও আসতে পারে। তাই নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে সাঁতরাতে পারলে ভালো। এতে আপনার শরীরের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পেশির ব্যবহার করার হারও অনেকটা বেড়ে যাবে।
৫. সপ্তাহে ৪/৫ দিন সময় দিন
সাঁতার শরীরের জন্য উপকারী হলেও ঠিক কতখানি সাঁতরানো উচিত? বেশিরভার পুষ্টিবিদ আর ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘জগিং, কার্ডিও, হাঁটা বা সাঁতার যে কোনো ব্যায়ামেই শরীর ভালো থাকবে। তবে নিয়মিত সাঁতার কাটলে তার জন্য সপ্তাহে ৪/৫ দিন সময় রাখা দরকার।’
৬. শুরু হোক ধীরগতিতে
একেবারে শুরুতেই যদি আপনি অনেক বেশির সাঁতরে ফেলেন, তবে সেটা আপনার শরীরে অনেক বেশি ক্লান্তি আনবে। সেইসঙ্গে মনের উপরেও চাপ ফেলতে পারে। এ কারণে সাঁতারের অভ্যাসের শুরুটা ধীরগতির হলে ভালো হয়। প্রথম দিকে প্রতিদিন ১৫/২০ মিনিট করে সাঁতার কাটুন। প্রয়োজনে একদিন পরপর সাঁতরাতে পারেন। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে সপ্তাহে পাঁচদিন ৩০ মিনিট করে সাঁতারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এর ফলে শরীরের ওজন ঝরানো অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
৭. লাইফ জ্যাকেটের ব্যবহার
অভ্যাস না থাকার কারণে দক্ষ সাঁতারু না হতে পারাটাই স্বাভাবিক। তবে যদি সাঁতার কাটবেন এমন মনস্থির করেই ফেলেন তাহলে কিছু সরঞ্জাম যেমন- পুল নিডল, কিকবোর্ড বা লাইফ জ্যাকেটের মতো জিনিস সাথে রাখতে পারেন। তবে এতে হয়তো ব্যায়ামের জন্য খুব বেশি উপকার হবে না। তবে ধীরে ধীরে সাঁতার কাটা শিখে যাবেন।
৮. ডায়েটে ভারসাম্য
ওজন ঝরানোর জন্য ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। জিম করে বা এক্সারসাইজ শেষে যেমন ভারী খাবার খেতে নিষেধ করা হয়, সাঁতার শেষেও ব্যাপারটাও ঠিক এমনই। সাঁতার শেষে ভারী খাবার খেয়ে ফেললে কিন্তু ওজন কমানো সম্ভব না। খেয়াল রাখবেন, খাবারের মাধ্যমে যতটুকু ক্যালোরি আপনি গ্রহণ করছেন, সাঁতারের মাধ্যমে যেন এরচেয়ে বেশি খরচ হয়। আপনি যদি খুব কম পরিমাণে ওজন ঝরাতে চান, সেক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে চলতে হবে। সাঁতারে কিন্তু অন্য ব্যায়ামের তুলনায় অনেক বেশি ক্যালোরি খরচ হয়। তাই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে দুইদিকেই ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরি।
কেএস/