ক্যান্সার চিকিৎসায় ঋণের বোঝা, দিতে না পেরে দম্পতির আত্মহত্যা
স্ত্রীর ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসার বিপুল খরচ আর বইতে পারছিলেন না তিনি, তাই সপরিবারে আত্মহত্যার প্ল্যান! ১১ বছরের মেয়েকেও সেই গণ-আত্মহত্যায় সামিলের চেষ্টা করেছিলেন, তবে ভাগ্যগুণে বেঁচে যায় সেই খুদে। ঘটনাটি ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের। সেখানেই থাকতেন আদতে কেরালা নিবাসী দম্পতি রিজু এবং প্রিয়া নায়ার। বৃহস্পতিবার নারা রোডের ভাড়াবাড়িতে উদ্ধার হয় তাদের দেহ।
প্রেম করে বিয়ে মানেনি পরিবার। অশান্তি লেগেই থাকত। তার মধ্যে প্রিয়ার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। কেরালা থেকে মাস তিনেক আগে নাগপুরে চলে আসেন নায়ার দম্পতি। পেশায় পেন্টার রিজু ভেবেছিলেন নাগপুরে ভালো কাজ পাবেন, সেই সঙ্গে স্ত্রীর চিকিৎসাও চালাবেন। কিন্তু নাগপুরে আসার পর সে ভাবে কাজ পাননি রিজু। তা ছাড়া অসুস্থ স্ত্রীর পাশে থাকতে গিয়ে বাইরে কাজের বেশ কিছু সুযোগও হাতছাড়া হয়।
এদিকে, প্রিয়াকে প্রতি সপ্তাহে সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে একটা ইঞ্জেকশন নিতে হতো, যার দাম ১৭শ’ টাকা। ইঞ্জেকশন না নিলে কান এবং নাক দিয়ে রক্তপাত শুরু হতো। চিকিৎসার খরচ চালাতে অনেকের থেকে টাকা ধার করেছিলেন নায়ার দম্পতি। এমনকী তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রিকসা চালকের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছিলেন!
প্রত্যেককেই বলেছিলেন, কেরালার পরিজনের থেকে অর্থসাহায্য এলে ধার মিটিয়ে দেবেন তিনি। কিন্তু সেই টাকা আর আসেনি।
পুলিশের ধারণা, বেড়ে চলা আর্থিক অনটনের কারণেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন নায়ার দম্পতি। ম্যাঙ্গো জুসে কীটনাশক মিশিয়ে খান তারা। আর মেয়ে বৈষ্ণবীর পছন্দের মাংস-ভাতেও মিশিয়ে দেন বিষ। রাতে মাংস-ভাত খেয়ে বৈষ্ণবী ঘুমোতে গেলেও শরীর খারাপ লাগায় সে উঠে বমি করে। আর তাতেই বেঁচে যায় ছোট্ট মেয়েটা।
এদিকে, রিজু এবং প্রিয়া কীটনাশক মেশানো পানীয় খাওয়ার পাশাপাশি ছুরি দিয়ে হাতের শিরা কাটার চেষ্টাও করেন। সকালবেলা উঠে রান্নাঘরে বাবা-মাকে নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবেশীদের ডাকে বৈষ্ণবী। প্রতিবেশীরাই পুলিশে খবর দেন। রিজুদের বাড়িতে কীটনাশক মেশানো ম্যাঙ্গো জুসের গ্লাস উদ্ধার করে পুলিশ। তবে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি।
রিজু এবং প্রিয়ার দেহ মেয়ো হাসপাতালে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। মেয়ো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বৈষ্ণবীকেও। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন সে। পুলিশ জানায়, পরিজন এবং বন্ধুদের অধিকাংশের নম্বর ফোন থেকে ডিলিট করে ফেলেছিলেন নায়ার দম্পতি। ফলে তাদের ব্যাঙ্কের পাসবুক এবং আধার কার্ড দেখে কেরালার বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করতে হয় পুলিশকে।
ঠিকানা পেয়ে কেরালা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে মহারাষ্ট্রের পুলিশ। নায়ার দম্পতির পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ট্রান্সলেটর বা অনুবাদকের সাহায্য নিতে হয় পুলিশকে।
জেএইচ