গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৮৬ হাজারের বেশি: ল্যানসেট সমীক্ষা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের চলমান হামলায় মৃতের মোট প্রকৃত সংখ্যা এক লাখ ৮৬ হাজারের বেশি। শুধু তাই নয়, গাজার মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগ মানুষ তাদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন।
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এমনই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আরব নিউজ ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদন এমনটাই জানিয়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ি, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের চালানো হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় ইসরাইলের চলমান সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
তবে ল্যানসেটের গবেষণা রিপোর্ট বলছে, গাজায় স্বাস্থ্য সুবিধা, খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হওয়ার কারণে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। ল্যানসেট সমীক্ষার মতে, ৭ অক্টোবর ইসরাইলের হামলা শুরুর আগে গাজার মোট জনসংখ্যা ছিল ২৩ লাখ। ইসরাইলি হামলায় এই জনসংখ্যার মধ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার জনই প্রাণ হারিয়েছেন।
ল্যানসেট সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, মৃতের সংখ্যা নিয়ে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য সঠিক নয় বলে মনে করে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা, জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।(ডব্লিউএইচও) তবে আমরা ধারণা করছি প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেকগুণ বেশি।
ল্যানসেট গবেষণা রিপোর্টে আরও বলা হয়, গাজায় মোট কতজন নিহত হয়েছেন সে বিষয়ে গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থাসহ জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সঠিক নয় বলে মনে করে। গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ি, মোট মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেকগুণ বেশি।
ওই সমীক্ষায় আরও বলা হয়, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। ইসরাইলি বোমা হামলায় ওই সময় ৩৫ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে এধরণের পরোক্ষা মৃত্যুর সংখ্যা প্রত্যক্ষ মৃত্যুর সংখ্যার থেকে অন্তত তিন থেকে ১৫ গুণ বেশি বলে গণমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে।
ল্যানসেট গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, গাজার বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে প্রতিটি প্রত্যক্ষ মৃত্যুর বিপরীতে অন্তত চারটি পরোক্ষ মৃত্যু থাকতে পারে। আর এই হিসেবে গাজায় প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৮৬ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।
ঐতিহাসিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতসহ যুদ্ধের সম্পূর্ণ মূল্য স্বীকার করার জন্য প্রকৃত তথ্য নথিভুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এটি একটি আইনি প্রয়োজনও বলে মন্তব্য উঠে এসেছে ল্যানসেট’র ওই গবেষণা রিপোর্টে।
এমআর//