বিয়ের আগে নিজেকে প্রস্তুত করবেন যেভাবে
বিয়ে একজন নারীর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত। বিশেষ এই দিনটি নিয়ে সব মেয়েরই অনেক পরিকল্পনা থাকে। সেই সঙ্গে বিয়ের পোশাক কেমন হবে, কেমন সাজ হবে, নিজেকে কেমন দেখাবে এমন নানা চিন্তাও যুক্ত হয়। এই চিন্তা কিন্তু শুরু হয় যখন থেকে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে যায় তখন থেকেই। এসব চিন্তার সবই সফল হবে যদি বিয়ের কিছুদিন আগে থেকে সঠিকভাবে নিজের শরীরের যত্ন নেয়া হয় এবং সচেতন থাকা হয়। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কীভাবে তা সম্ভব।
কেমন হবে হবু কনের প্রস্তুতি?
নিজেকে বধূ বেশে সাজানোর জন্য হবু কনের বিয়ের কিছুদিন আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে হবে। অন্তত তিন মাস আগে থেকে হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে নিজেকে প্রস্তুত করারও যেমন সময় পাওয়া যাবে, তেমনই বিয়ের আগ মুহূর্তে তাড়াহুড়োও লাগবে না। চলুন তাহলে হবু কনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
বিয়ের তিন মাস আগে
১। ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া
বিয়ের আগে থেকেই চুল ও ত্বকের যত্ন নেয়া জরুরি। নইলে বিশেষ এই দিনে কনেকে দেখতে মোটেও ভালো লাগবে না। আর সুন্দর চুল ও ত্বকের জন্য ভিটামিন, আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে নিয়মিত। যেমন- সবুজ শাক সবজি, ফলমূল, ডিম, বাদাম, মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি। আমাদের চুল, ত্বক ও নখের গঠনে বায়োটিনের ভূমিকা রয়েছে। তাই খাদ্যতালিকায় এমন খাবারও রাখতে হবে যেগুলোতে বায়োটিন রয়েছে। যেমন- যেকোনো ধরনের ডাল, সয়াবিন, বাদাম, ফুলকপি, ডিমের কুসুম, কলিজা, কলা, মাশরুম, চিনা/কাজু বাদাম ইত্যাদি। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০-১০০ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন প্রয়োজন হয়। যা দৈনন্দিন খাবার থেকে মেটানো সম্ভব। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো রাখলে বায়োটিনের ঘাটতি হবে না। যদি সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে আগে পরামর্শ করে নিন।
২। হেয়ার কালার করা
অনেকেই বিয়ের দিন ডিফারেন্ট একটি লুক পাওয়ার জন্য হেয়ার কালার করেন। চুল কালার করতে পারেন, তবে সেটা যেন একদম বিয়ের আগে আগে না হয়। অন্তত তিন মাস আগেই কালার করুন। যদি কোনো কারণে কালার ভালো না লাগে তাহলে অনুষ্ঠানের আগেও কালার বদলে ফেলার একটা সুযোগ পাওয়া যাবে।
৩। নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেয়া
ত্বকের যত্ন নিয়ে অবহেলা করলে বিয়ের পুরো আয়োজনেই আপনাকে নিষ্প্রাণ লাগবে। তাই একদম শুরু থেকেই ত্বকের যত্ন নিতে হবে। এজন্য রেগুলার মর্নিং ও নাইট স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে হবে। প্রতিদিন ডাবল ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং ছাড়াও সপ্তাহে ১-২ বার স্কিন এক্সফোলিয়েট করুন। এছাড়া হেলদি ও প্লাম্পি স্কিন পাওয়ার জন্য সপ্তাহে অন্তত ১-২ বার ইউজ করুন শিট মাস্ক। স্কিনের গ্লো ধরে রাখতে তিন মাস আগে থেকেই ফেসিয়াল করা শুরু করতে পারেন।
৪। ফিটনেস ও নিউট্রিশন প্ল্যান
বিয়ের আগে স্লিম হওয়ার জন্য অনেকেই ক্রাশ ডায়েট করা শুরু করেন। এটা একদমই করা উচিত নয়। বিয়েতে আপনাকে যেন সুন্দর দেখায়, সেজন্য সবার আগে আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে। ক্রাশ ডায়েট করলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই হুটহাট ডায়েট না করে, একটি নিউট্রিশন চার্ট তৈরি করুন এবং সেটাই ফলো করুন। সম্ভব হলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। বিয়ের আগে বাইরের জাঙ্ক ফুড খাওয়া কমিয়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিন।
৫। হেয়ার স্টাইল ও মেকআপ ট্রায়াল
বিয়েতে কীভাবে চুল বাঁধবেন, কীভাবে সাজবেন- তার একটি ট্রায়াল দিতে পারেন বিয়ের আগে। যদি মেকআপ বা আউটফিট নিয়ে কোনো কনফিউশন থাকে, তাহলে সেটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আর হাতে সময় থাকায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেয়া যাবে।
বিয়ের দুই মাস আগে
১। মেকআপ আইটেম ও অন্যান্য এক্সেসরিজ কিনে ফেলুন
বিয়ের আগে নানা কাজের ব্যস্ততা থাকে। তখন তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো কেনা মিস হয়ে যেতে পারে। তাই হাতে সময় নিয়ে মাস দুই আগে থেকেই মেকআপ আইটেমগুলো কিনে ফেলুন। শাড়ির সাথে ম্যাচিং লিপস্টিক, ফাউন্ডেশন, ব্লাশ, নেইল পলিশ, ফেইস প্যালেট, মেকআপ ব্রাশ ইত্যাদি যা যা প্রয়োজন লিস্ট করে নিন। এবার লিস্ট অনুযায়ী কিনে ফেলুন দরকারি মেকআপ আইটেমগুলো। শাড়ির সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ, পেটিকোট, জুতা, পার্স, ওড়না এসবও কিন্তু আগেই কিনে ফেলতে হবে। কারণ শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়োয় যে কোনো কিছু মিস হয়ে যেতে পারে। আগে লিস্ট করে রাখলে কোনোকিছু মিস হওয়ার চান্স থাকবে না।
২। ফিটনেসে মনোযোগী হোন
নিজেকে ফিট রাখার দিকে মনোযোগ দিন। যদি জিমে যাওয়া শুরু করেন তাহলে সেখানে একটু বেশি সময় দিন। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা ইয়োগা করুন। সেই সাথে ডায়েট প্ল্যান মেনে চলুন।
৩। আইল্যাশ এক্সটেনশন করতে পারেন
অনেকেই ফেইক আইল্যাশ পরতে চান না। যদি বিয়ের দিনে ফেইক আইল্যাশ পরতে না চান, তাহলে ভালো কোনো বিউটি সেল্যুন থেকে আইল্যাশ এক্সটেনশন করতে পারেন।
বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে
১। হেয়ার কাট
যদি বিয়ের আগে চুল কাটতে চান তাহলে দুই সপ্তাহ আগেই কেটে নিন। এছাড়া চুল ট্রিমও করাতে পারেন। বিয়ের সময় কীভাবে চুল বাঁধবেন সেটা মাথায় রেখেই চুল কাটুন। নইলে হেয়ার স্টাইলিং মনমতো নাও হতে পারে।
২। হ্যান্ড ও নেইল কেয়ার
নেইল পলিশ দেয়ার অভ্যাস থাকলে, বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে থেকে সেটি বন্ধ রাখুন। কারণ বারবার নেইল পলিশ লাগানো ও রিমুভ করার ফলে নখের টেক্সচার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে বিয়ের সময় নখ দেখতে মোটেও সুন্দর লাগবে না। তাই কিছুদিন অফ রাখুন, বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় একবারে অ্যাপ্লাই করুন। এছাড়া নখের কিউটিকল ভালো রাখতে নিয়মিত আমন্ড বা অলিভ অয়েল, ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখুন। নখের সাথে সাথে হাতও যেন ময়েশ্চারাইজড থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। হাতের জন্য হ্যান্ড লোশনও ইউজ করতে পারেন।
বিয়ের এক সপ্তাহ আগে
১। ফেসিয়াল
বিয়ের তিন মাস আগে থেকেই ফেসিয়াল শুরু করা উচিত। তবে শেষেরটা করাতে হবে বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে। পাশাপাশি নিয়মিত যত্ন তো আছেই। যদি পার্লারে যাওয়ার সময় না পাওয়া যায়, তাহলে ফেসিয়াল কিট কিনে ঘরে বসেই এ কাজটি করে নিতে পারেন।
২। ভ্রু প্লাক ও ওয়্যাক্সিং
বিয়ের ৫-৭ দিন আগে ফুল বডি ওয়্যাক্সিং করুন। ওয়্যাক্সিং এর পর পোস্ট ওয়্যাক্সিং স্কিন কেয়ার স্টেপ হিসেবে আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি চান, সে সময় ভ্রু প্লাকটাও করে ফেলতে পারেন।
৩। ফেইসপ্যাক
বিয়ের আগে থেকেই ঘরোয়াভাবে ফেইসের স্কিনের যত্ন নিতে হবে। ত্বকের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ফেইসপ্যাক। এছাড়া রাইস ওয়াটার, টমেটোর রস ও সামান্য কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন ফেইসপ্যাক। এই প্যাকে অল্প সময়েই ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। ত্বকে যদি পোড়া ভাব থাকে তাহলে টক দই ব্যবহার করতে পারেন। যদি অয়েলি স্কিন হয়, তাহলে ক্লে মাস্ক ব্যবহার করুন। যদি স্কিন ড্রাই হয়, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন হাইড্রেটিং মাস্ক। এতে ত্বক থাকবে ময়েশ্চারাইজড ও প্লাম্পি। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য উপটান খুব ভালো কাজ করে। তাই সপ্তাহে ২-৩ বার উপটান দিয়েও প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন।
৪। হট অয়েল ট্রিটমেন্ট
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়ার জন্য হট অয়েল ম্যাসাজ করতে হবে। এই ট্রিটমেন্টের সুবিধা হচ্ছে- চুল সিল্কি হয়, চুলের গোড়া শক্ত হয়, হেয়ার গ্রোথ বাড়ে, নার্ভ রিল্যাক্স হয়। বিয়ের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় যেন চুলের সৌন্দর্য বজায় থাকে তাই হট অয়েল ম্যাসাজ করতে ভুলবেন না যেন।
৫। মেনিকিওর/পেডিকিওর
বিয়ের সময় শুধু ফেইস নয়, হাত পায়ের যত্নও নিতে হবে সমানভাবে। তাই মেনিকিওর বা পেডিকিওর দুটোই করা জরুরি। ঘরে বসেই এগুলো করা যায়। যদি পার্লার থেকে করাতে চান, সেটাও করিয়ে নিতে পারেন। যদি পা ফাটার সমস্যা থাকে, তাহলে আলাদাভাবে তার যত্ন নিতে হবে।
বিয়ের আগের দিন
১। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার আগের দিন সবচেয়ে বেশি অস্থির, দুশ্চিন্তাময় দিন হয়। কিন্তু নিজেকে যেন আকর্ষণীয় লাগে সেজন্য সকল চিন্তাকে দূরে ঠেলে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে আপনিও রিল্যাক্স থাকবেন।
২। শরীর হাইড্রেটেড রাখার জন্য নিয়মিত পানি পান করা প্রয়োজন। আর বিয়ের আগের দিন নানা চিন্তায় পানি পানের কথা মোটেও ভুলে যাওয়া যাবে না। এতে বিয়ের দিন শরীর হাইড্রেটেড থাকবে।
৩। লিপ স্ক্রাবিং করতে হবে এ সময়েই। স্ক্রাবিং শেষে অবশ্যই লিপ বাম লাগিয়ে নিন।
কেএস/