জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দাবি বিক্ষুব্ধ ৭৪ নাগরিকের
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক হত্যার বিচার দাবি করেছেন দেশের ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। একই সঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনসহ প্রতিটি ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (২৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানান বিক্ষুব্ধ নাগরিকেরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গেলো ১৬ জুলাই থেকে পুলিশসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল মন্ত্রীর প্ররোচনায় তাঁদের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রসংগঠনের সহিংস কর্মীরা নজিরবিহীন দমন–পীড়নের তাণ্ডব চালিয়েছেন। অন্যদিকে বিরোধীপক্ষও ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতির নামে একে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিক্ষুব্ধ নাগরিকেরা বলেন, তারা ছাত্র-জনতা হত্যা ও জনগণের সম্পত্তি বিনষ্টের নাশকতার পেছনে যেকোনো ধরনের অপরাজনীতির নিন্দা করছেন। সরকারের বল প্রয়োগে কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা দাবি করেন, এত অল্প সময়ে কোনো একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এমন বিপুলসংখ্যক হতাহতের নজির গত এক শ বছরের ইতিহাসে (মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ বাদ দিলে) এ দেশে তো বটেই, এই উপমহাদেশেও মিলবে না। এমন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা বা ধিক্কার ও প্রতিবাদের উপযুক্ত ভাষা তাঁদের জানা নেই। এই বিপুল প্রাণহানির দায় প্রধানত সরকারের।
এমন পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা সরকারে কাছে চার দফা দাবি জানান
১ নিহতদের প্রতি সম্মান জানাতে শোক দিবসে ঘোষণা দিতে হবে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থী আহত এবং নিহতব হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা অবিলম্বে সরকারকে প্রকাশ করতে হবে।
২ দায় মেনে নিয়ে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারকে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩ শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক ও আটক রেখে বিবৃতি আদায়, দমন–পীড়ন, শিক্ষার্থী ও তাঁদের স্বজনদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, পুলিশ ও র্যাবের লাগামহীন হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৪ স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে কারফিউ তুলে নিতে হবে। সাঁজোয়া যান,হেলিকপ্টার ও অন্যান্য সরঞ্জাম রাস্তায় নামানো হয়েছে, অবিলম্বে তা নিজ নিজ স্থানে ফেরত নিয়ে যেতে হবে। অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে ইন্টারনেটের ওপর সব সরকারি নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটাতে হবে। ভিন্নমতের মানুষকে হয়রানি ও তাঁদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশিষ্ট নাগরিকেরা হলেন—
১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকারকর্মী, ২ হামিদা হোসেন, মানবাধিকারকর্মী , ৩ খুশী কবির, মানবাধিকারকর্মী ৪. শাহদীন মালিক, আইনজ্ঞ ও সংবিধানবিশেষজ্ঞ, ৫. রাশেদা কে চৌধূরী, মানবাধিকারকর্মী, ৬. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থনীতিবিদ, ৭. হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ, ৮. আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ, ৯. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অর্থনীতিবিদ, ১০. মেঘনা গুহঠাকুরতা, মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক, ১১. জেড আই খান পান্না, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ১২. ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী, ১৩. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, ১৪. শিরিন হক, নারী অধিকারকর্মী, ১৫. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইনজীবী, ১৬. শামসুল হুদা, মানবাধিকার ও ভূমি অধিকারকর্মী, ১৭. বদিউল আলম মজুমদার, গবেষক ও পর্যবেক্ষক, ১৮. সারা হোসেন, আইনজীবী, ১৯. পারভীন হাসান, অধ্যাপক, ২০. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, ২১. মো. তানজিমউদ্দিন খান, অধ্যাপক, ২২. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, ২৩. মুশতাক এইচ খান, অধ্যাপক, ২৪. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, ২৫. ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ২৬. বীনা ডি কস্তা, অধ্যাপক, ২৭. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ২৮. সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, ২৯. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ৩০. নোভা আহমেদ, অধ্যাপক, ৩১. নাভীদা খান, অধ্যাপক, ৩২. স্বপন আদনান, শিক্ষাবিদ, ৩৩. দীনা সিদ্দিকী, শিক্ষাবিদ, ৩৪. নাসরিন খন্দকার, পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চার, ৩৫. সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, ৩৬. ফারহা তানজিন তিতিল, সহযোগী অধ্যাপক, ৩৭. মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, ৩৮. রিজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, সহযোগী অধ্যাপক, ৩৯. মো. সাইমুম রেজা তালুকদার, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, ৪০. সুব্রত চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ৪১. তবারক হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ৪২. শুভ্র চক্রবর্তী, মানবাধিকারকর্মী, ৪৩. শরীফ ভূঁইয়া, আইনজীবী, ৪৪. সাইদুর রহমান, আইনজীবী, ৪৫. প্রিয়া হাসান চৌধুরী, আইনজীবী, ৪৪. শারমিন খান, আইনজীবী, ৪৬. নাসের বখতিয়ার, সাবেক ব্যাংকার, ৪৭. আবু সাঈদ খান, সাংবাদিক, ৪৮. সাঈদা গুলরুখ, সাংবাদিক, ৪৯. সালিম সামাদ, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম অধিকারকর্মী ,৫০. শারমিন মুরশিদ, মানবাধিকারকর্মী ও পর্যবেক্ষক, ৫১. ফস্টিনা পেরেইরা, মানবাধিকারকর্মী, ৫২. রুশাদ ফরিদী, মানবাধিকারকর্মী, ৫৩. রেজাউল করিম লেলিন, গবেষক ও অধিকারকর্মী, ৫৪. নুর খান, মানবাধিকারকর্মী, ৫৫. রেজাউল করিম চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী, ৫৬. সাদাফ নুর, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী, ৫৭. তাসনিম সিরাজ মাহাবুব, মানবাধিকারকর্মী, ৫৮. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী, ৫৯. রেহেনুমা আহমেদ, লেখক ও গবেষক, ৬০. আলতাফ পারভেজ, লেখক ও গবেষক, ৬১. আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি ও লেখক, ৬২. জাকির হোসেন, মানবাধিকারকর্মী, ৬৩. মাহিন সুলতানা, মানবাধিকারকর্মী, ৬৪. রোজিনা বেগম, গবেষক ও অধিকারকর্মী, ৬৫. বারিশ হাসান চৌধুরী, গবেষক, ৬৬. রেজওয়ান ইসলাম, গবেষক ও অধিকারকর্মী, ৬৭. জাহানারা খাতুন, মানবাধিকারকর্মী, ৬৮. ফজিলা বানু লিলি, অধিকারকর্মী, ৬৯. আরিফা হাফিজ, মানবাধিকারকর্মী, ৭০. ইশরাত জাহান প্রাচী, অধিকারকর্মী ৭১. দীপায়ন খীসা, মানবাধিকারকর্মী, ৭২. হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকারকর্মী ৭৩. মুক্তশ্রী চাকমা, নারী অধিকারকর্মী ও ৭৪. অরূপ রাহী, সাংস্কৃতিককর্মী।
আই/এ