শেখ হাসিনাকে উৎখাতের অভিযোগ হাস্যকর: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তাঁর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা থাকতে পারে। গণবিক্ষোভের পেছনেও থাকতে পারে মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা। এমন সবজল্পনা ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
তবে এসব জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলো শেখ হাসিনাকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। এধরণের অভিযোগ হাস্যকর। একইসঙ্গে এই ধরনের অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও উল্লেখ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান বেদান্ত প্যাটেল।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পাকিস্তানি এক সাংবাদিক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান।
তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান বেদান্ত প্যাটেলকে বলেন, `বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গণবিক্ষোভের আয়োজনের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই গণবিক্ষোভ ও সহিংসতার জেরে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ি করেছেন। এবিষয়ে আপনি কী কোন মন্তব্য করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘এটা হাস্যকর। শেখ হাসিনার পদত্যাগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ছিল এমন কোনো ধারণা একেবারেই মিথ্যা। আমরা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রচুর বিভ্রান্তিমূলক খবর দেখেছি এবং আমরা ডিজিটাল ইকোসিস্টেমজুড়ে তথ্যের সত্যতা আরও শক্তিশালী করার জন্য অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অংশীদারদের সাথে।’
এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না বলে জানায় হোয়াইট হাউস। সোমবার (১২ আগস্ট )হোয়াইট হাউসের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতরের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল কিনা তা জানতে চেয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন।হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়েরেওই সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের একটি দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাবে সায় দেননি তিনি। একারণে যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া কী?
জবাবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়েরে এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন। স্পষ্টভাবে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না। একইসঙ্গে বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপের অভিযোগ ‘কেবলই মিথ্যা’।
রোববার(১১ আগস্ট) ভারতের ইকোনমিক টাইমস পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ভূমিকা পালন করেছে কারণ তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ চায়।
হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে এই বার্তা ইকোনমিক টাইমসে উদ্ধৃত হয়েছে। এসব বক্তব্যেকে মিথ্যা দাবি করেন কারিন জ্যঁ-পিয়েরে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে যদি কোনো প্রতিবেদনে বলা হয় বা গুজব ছড়ানো হয় তবে তা নিছক মিথ্যা।’আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশি জনগণেরই বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা উচিত এবং আমাদের অবস্থান ঠিক এটাই।
এমআর//