হজ খরচ নিয়ে ‘বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট’ গড়েছেন হাব সভাপতি তসলিম
বিমান ভাড়া ও অন্যান্য অজুহাতে প্রতি বছরই বাংলাদেশে হজরে খরচ বাড়ানো হয়। অথচ প্রতিবেশি অনেক দেশে হজের খরচ কম। এনিয়ে এতা দিন কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি। মুখ বোঝে মেনে নিতে হয়েছে এ অপকর্ম। কারণ এ ‘বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট’ এর মূল হোতা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তসলিম ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশের এজেন্ট (জিএসএ)। ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সকে থার্ড ক্যারিয়ার হিসেবে চালু করে বাংলাদেশ বিমানের অর্ধেকেরও বেশি যাত্রী তিনি ফ্লাইনাসে বহন করেছেন। হজযাত্রীদের পকেট কেটে নেয়া শত শত কোটি টাকা সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরাও নিয়েছেন। বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট।
তবে শেখ হাসিনার পতনের পর হজ এজেন্সির মালিকরা তসলিমের স্বেচ্ছাচারিতা ও হজযাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তারা সিন্ডিকেটের কবজা থেকে হাব ও হজযাত্রীদের বাঁচানোর দাবি জানিয়েছেন।
এজেন্সি মালিকরা জানান, ২০২৩ সালে হাব সভাপতি তসলিম ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশে এজেন্ট (গ্লোবাল সেলস এজেন্ট-জিএসএ) হন। ওই বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাফে ৫৮ হাজার টাকা বেড়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা হয়ে যায়। হঠাৎ এ ভাড়া বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করেন তসলিম। ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে বাড়তি ভাড়া তার পকেটে ঢোকান।
ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তসলিম ওই বছর বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে ২০ হাজার যাত্রী ফ্লাইনাসে বহন করেন। চলতি বছরও ফ্লাইনাস ২০ হাজার যাত্রী বহন করেছে।
হাব সদস্যরা জানান, তসলিম আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদের প্রভাব খাটিয়ে হাবকে জিম্মি করে রেখেছেন। ফলে হাবে অন্য রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজন নেতৃত্বে আসতে পারছেন না। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ফেনীর সাবেক এমপি নিজাম হাজারী তাকে প্রশ্রয় দেন। তাদের ছত্রছায়ায় তসলিম একক আধিপত্য বিস্তার ও হজ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পালানোর পর থেকে তসলিমও দেশে নেই। তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে ধারণা করছেন হাব সদস্যরা।
হজ এজেন্সি মালিকরা জানান, ২০১৯ সালে তসলিম ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ সুবিধাবাদী কিছু লাইসেন্সের মালিককে নিয়ে হাব অফিস দখল করে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন তসলিম।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১৯ সালে হজের বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। সে ভাড়া বেড়ে ২০২২ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়ে যায়। ২০২৩ সালে এক লাফে বিমান ভাড়া বেড়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবু ভাড়া কমানো হয়নি। ভাড়া বাড়ানোর পেছনে নাটের গুরু হিসেবে কাজ করেন হজ সিন্ডিকেটের নেতা শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
হাব নেতারা জানান, গেলো ৬ বছরে বিমানের টিকিটের অতিরিক্ত ভাড়া এবং ১ শতাংশ বাড়ি ভাড়া থেকে তসলিম ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে তার অবস্থান জানতে আত্মগোপনে থাকায় তসলিমের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জেএইচ