সন্তান কি খুব মারকুটে হয়ে যাচ্ছে? এমন পরিস্থিতিতে যা করবেন
মুখে মুখে তর্ক, কোনও কথা না শোনা, কিছু ক্ষেত্রে জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলা বা অবাধ্য কোনও আচরণও ক্রমশ রপ্ত করে ফেলছে খুদেরা। এমন পরিস্থিতিতে কী করণীয়?
সন্তান কি খুব মারকুটে হয়ে যাচ্ছে? ক্লাসমেটদের সাথে মারামারি করছে, খেলার সাথীর সাথেও ঝগড়া-মারামারি করেছে। বর্তমানে ছোট থেকে বড় সব বয়সীর রাগের মাত্র বেড়েছে। সন্তানের রাগ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন মা-বাবারা। এই রাগের কারন কি? অন্যদিকে কথায় কথায় মারামারি কোনভাবেই শোভনিয় আচরণ নয়।
এদিকে সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে কড়া হতে হচ্ছে বাবা-মাকে। যার বিপরীতে বাড়ছে সন্তানের রাগ। ফলে দূরত্ব বাড়ছে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের। মুখে-মুখে তর্ক, কোন কথা না শোনা, কিছু ক্ষেত্রে জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলা বা অবাধ্য কোন আচরণ ক্রমশ রপ্ত করে ফেলছে খুদেরা। এমন পরিস্থিতিতে কী করণীয়?
ছোটবেলায় মারামারি করা খুব স্বাভাবিক। খেলতে গিয়ে এমন হয়ে থাকে। তবে রাগ, জেদ আর কথায় কথায় অন্যের গায়ে হাত তোলাটা যদি অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন সচেতন হতে হবে।
১. সন্তান যদি অতিরিক্ত অবাধ্য গেলে তাকে সাঁতার, মার্শাল আর্ট, যোগব্যায়াম এমনই কিছুতে ভর্তি করে দিন। যাতে সে নিময় মাফিক পরিবেশে বর হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান বা নাচ শেখা, নাটক-আবৃত্তি ইত্যাদি সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখুন, এর প্রভাবে বাচ্চাদের মাঝে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বিরাজ করবে।
২. বেশির ভাগ সময়েই সন্তান রেগে গেলে অভিভাবকেরা আরও রেগে যান। গায়ের জোরে তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। অনেক সময়ে গালি গালাজ করেন। সন্তান রেগে গেলে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলে কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাই বাচ্চাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ধীরে ধীরে, জোর করে নয়।
৩. সারা দিন পরে কর্ম ক্ষেত্র থেকে মা-বাবা বাড়ি ফেরার পরে সন্তান হয়তো মনে মনে তাদের সঙ্গে খেলতে চায়। কিন্তু মা-বাবা তখন ক্লান্ত শরীরে বিশ্রামে। এই যে দৈনিক একটা সংঘর্ষ, এটাও কিছুক্ষেত্রে দায়ী। তাই বাচ্চারা কী চাইছে তা বুঝতে হবে। নিজের পরিস্থিতি সন্তানকে বোঝাতে হবে।
৪. সন্তানকে বকাঝকা না করে ভাল ভাবে বোঝানো উচিৎ। হয়তো এমন হতেই পারে, আপনাদের সারা দিন কাছে না পেয়ে মনে পাহাড় সমান অভিমান নিয়ে বসে আছে। তারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এ রাগ। সে ক্ষেত্রে সন্তানকে সঙ্গ দিন। চাকরি বা কাজের সূত্রে দিনভর বাইরে থাকলেও ওর সঙ্গে ফোনে বা ভিডিও কলে কথা বলুন। বাড়ি ফিরে একসঙ্গে সময় কাটান। তখন দুষ্টুমি করার জন্য না বকে বরং ওর কথা শুনুন। ভাল ভাবে বোঝান কোনটা ঠিক আর কোনটি নয়।
৫. মোবাইল দেখার সময় কমিয়ে দিন। আপনি যখন বাড়িতে থাকবেন না, তখন বাচ্চাকে শান্ত রাখতে মোবাইল বা ট্যাব দিয়ে যাবেন না। খুব বায়না করলে দিনে একটা নির্দিষ্ট সময় মোবাইল দেখার জন্য রাখুন। তবে তা যেন দুই তিন ঘন্টা না হয়। ২০-৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখুন। বাচ্চার পাশে বসে মোবাইলে শিক্ষামূলক জিনিস দেখান। মোবাইলে এখন খুদেরা সহজেই ইউটিউব বা অন্যান্য সমাজমাধ্যম খুলে ফেলে। এমন কিছু বিষয় তারা দেখে, যা তাদের মন ও মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করে। সে কারণেও এমন আচরণ দেখা যেতে পারে।
৬. বাচ্চারা যেন সামাজিক মাধ্যম সম্পর্কে ধারনা না পায়। এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে বাবা-মাকেই। তাই সন্তানের সামনে বসে নিজে ফেসবুক-হোয়াট্সঅ্যাপে চ্যাট করবেন না। এখন বাবা-মায়েদের থেকেই বাচ্চারা মোবাইলে এমন জিনিস দেখে ফেলে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। তাই সে দিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
জেডএস/