পাপনের এক যুগ; কী হলো আর কী হওয়া উচিত ছিল!
অবশেষে নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করলেন। সময়ের হিসেবে ১২ বছর বা দীর্ঘ এক যুগ পর বিসিবি সভাপতির পদ ছাড়লেন পাপন।
পাপন ২০১২ সালে বিসিবির সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন পান। তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে বিসিবি নির্বাচনে পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৭ ও ২০২১ সালের বিসিবি নির্বাচনেও জয়ী হন নাজমুল হাসান। এভাবে টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকেন তিনি।
এই সদ্য সাবেক বিসিবি সভাপতি আওয়ামী লীগ সরকারের সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন, এমনকি সরকারের সবশেষ মন্ত্রীসভায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
বিসিবির আবহে আসার আগে আবাহনীর কাউন্সিলর ছিলেন পাপন। ক্লাব কাউন্সিলর হিসেবে বিসিবির পরিচালক পদে জায়গা করে নেন তিনি। পরিচালক থেকেই সভাপতি হওয়ার জন্য নির্বাচন করেন।
বিসিবির সভাপতি থাকাকালীন বোর্ডের সকল সিদ্ধান্তে পাপনের আলাদা একটি উপস্থিতি দেখা যেত। যত দিন বেড়েছে, এই উপস্থিতি আরও বেশি দেখা গেছে। একজন বোর্ড সভাপতি হিসেবে ক্রিকেটের প্রায় সর্বস্তরে হস্তক্ষেপ করার বিভিন্ন নজির রয়েছে তার।
অনেক সময় বলা হতো, তিনি ক্রিকেটকে একটু বেশিই ভালোবাসেন বলে এমন হয়। কিন্তু তার এই অতি-ভালোবাসা বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির পথে খুব যে কার্যকরী হয়ে উঠেছে তেমন প্রমাণ মেলে না। বিশেষ করে গত এক যুগে এদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি চোখে পড়ে না।
উন্নতি চোখে না পড়লেও, অভিযোগ ছিল অহরহ। ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভাগ-ভিত্তিক ম্যাচগুলোতে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল পাপনের আমলে। ম্যাচ ফিক্সিং থেকে শুরু করে, আম্পায়ারিং নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেগুলোতে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছিল। এরপরও ঘরোয়া ক্রিকেটের মানবৃদ্ধির জন্য খুব একটা তৎপর দেখা যায়নি বিসিবি বা বিসিবি সভাপতিকে।
শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট নয়, দেশের জেলা ক্রিকেট, বিভাগীয় ক্রিকেট বা স্কুল ক্রিকেটের মান-উন্নতির চেষ্টা খুব কমই করা হয়েছে নাজমুল হাসান পাপনের সময়ে। অভিযোগ থাকলেও, এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হতো। সমাধানের পথ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা বা কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি।
গণমাধ্যমের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলতেন নাজমুল হাসান পাপন। বলা হতো, তিনি গণমাধ্যমে কথা বলতে পছন্দ করেন। যে কথাগুলো পাপনের বলার কথা নয়- এমন অনেক কথা বিসিবির সভাপতি থাকাকালীন তিনি বলেছেন। যা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা, সমালোচনা, হাস্যরস হয়েছে। আদতে দেশের ক্রিকেটের উন্নতি কীভাবে করা যায়, সেসব নিয়ে তাত্ত্বিক কোনো বক্তব্য বিসিবি সভাপতির বরাতে কম এসেছে।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই, নাজমুল হাসান পাপন আত্মগোপনে ছিলেন। এরমধ্যে বিসিবি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পদত্যাগের ইচ্ছার কথা নিশ্চিত করে।
বুধবার (২১ আগস্ট) যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বিসিবির ডাকা এক জরুরি সভায় ইমেইলের মাধ্যমে পাপন নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। এসময় বিসিবির অন্যান্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাদের মনোয়নক্রমে নতুন সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদকে নির্বাচিত করা হয়।
এম এইচ//