ফাতিমা কেন নাহিদের বোন পরিচয় দিয়েছিলেন, জানালেন নিজেই
ফাতিমা তাসনিম নামের এক নারী কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে মিথিলা ফারজানার পদে চাকরি পেয়েছেন বলে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ওই নারীর তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বোন বলা হয়েছে। তিনি নাহিদ ইসলামের বোন হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন- এমন গুজব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে গেলো জুলাইয়ে ফাতিমা একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নিজেকে নাহিদের বোন পরিচয় দেন। এ বিষয়ে এবার মুখ খুললেন ফাতিমা। তিনি জানান, নাহিদ ইসলাম তার ভাই নন, পরিস্থিতির কারণে তখন নিজেকে তার বোন হিসেবে গণমাধ্যমে পরিচয় দিয়েছিলেন।
ফাতিমা বলেন, আমি যখন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ছিলাম তখন নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ছিলেন। তখন আমাদের মধ্যে ভাই-বোনের একটা সম্পর্ক হয়। সে আমাকে বোন হিসেবে শ্রদ্ধা করে, আমি তাকে ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করি।
তিনি আরও বলেন, ২১ জুলাই গুম থেকে নাহিদ ফিরে আসার পর তার সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু না হলে তার প্রাণের শঙ্কা ছিল। তখন আমি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ছিলাম (যেখান থেকে নাহিদকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ)। দেশের ওই সময়কার পরিস্থিতিতে হাসপাতাল রোগীর ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া ভর্তি নিচ্ছিল না।
‘কিন্তু আমি যেহেতু প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ স্যারের (গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ট্রাস্টি ছিলেন) সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছি, সেই হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসক থেকে নার্সরা আমাকে চিনতেন। তাই আমি নাহিদের লিগ্যাল গার্ডিয়ান বোন পরিচয় দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তখন সঙ্গে তার স্ত্রী থাকলেও তিনি কিছুটা অসুস্থ ও আতঙ্কে ছিলেন। তাছাড়া আমি তার বোন পরিচয় না দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি নিতে চাচ্ছিল না।
হাইকমিশনে চাকরি পাওয়ার খবর সত্য নয় দাবি করে ফাতিমা তাসনিম বলেন, ‘আমি পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমাকে হেনস্তা করার জন্য এটা করে থাকতে বলে আমি মনে করি।’
এ বছরের ২৬ জুলাই সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ডিবি পুলিশ নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদারকে হাসপাতাল থেকে তাদের হেফাজতে নেয়। সে সময় ফাতিমা তাসনিম নিজেকে নাহিদ ইসলামের বোন পরিচয় দিয়ে আল-জাজিরা, এএফপিসহ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় গণমাধ্যমে কথা বলেন।
ফাতিমা তাসনিম বলেন, ‘ওই পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়েছে, তাকে (নাহিদকে) একবার তুলে নিয়ে নির্যাতন করে ছেড়ে দিয়েছে, এবার মনে হয় মেরে ফেলবে। এই অবস্থায় নিউজটি যদি গণমাধ্যমে না জানাই সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন তো দেশে একটা যুদ্ধ চলছিল, সেই যুদ্ধের যোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে। কারণ আমি চেয়েছি তারা বেঁচে থাকুক, তারা বেঁচে থাকলে আন্দোলনটা বেঁচে থাকবে। সেই অবস্থায় কি পরিচয়ে আমার বক্তব্য গিয়েছে সেটা মূখ্য বিষয় ছিল না।’
এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, ফাতিমা তাসনিমের সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগ নেই, তবে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বোন হিসেবে তিনি আমাদের অনেক হেল্প করেছিলেন।’
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের একান্ত সহকারী মুনতাসির মাহমুদও বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফাতিমা তাসনিম নামে স্যারের (নাহিদ ইসলামের) কোনো বোন নেই। শুধু তাই নয়, স্যারের কোনো বোন নেই। তবে তার একটি ভাই আছে।’
কেএস//