বাড়ছে তিস্তার পানি, খোলা হলো ৪৪ জলকপাট
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে অস্বস্তিকর গরমের পর টানা দুই দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। গেলো ২৪ ঘণ্টায় শুধু রংপুরেই ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। অব্যাহত এই বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অতিবৃষ্টির ফলে অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানির চাপ সামলাতে তিস্তার ব্যারেজের ৪৪ জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার ও শনিবার দুদিন পর্যন্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আছে। এর ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল আগামী দুই দিন পর্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী এক দিন নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী দুইদিন লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
এসব জেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আভাস দিয়েছে অধিদপ্তর। অপরদিকে আগামী তিন দিন পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী চার দিন পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সকাল ৯টার দিকে কুড়িগ্রামের ব্রক্ষ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২০ দশমিক শূন্য চার সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২৩ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার), দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২৬ দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২৯ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার), ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ২২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২৬ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার), গাইবান্ধার যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৫ দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ১৯ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার), ঘাঘট নদের গাইবান্ধা পয়েন্টে ১৭ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২১ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার) পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন গণমাধ্যমে বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে তিস্তার ৪৪ জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানান,গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর জেলায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শুক্রবার রংপুর বিভাগসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুরের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, গত দুইদিন ধরে উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে রংপুর বিভাগের কোনো নদ-নদীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। প্রতিদিনের বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সব নদ-নদীর পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল। তবে আস্তে আস্তে বৃষ্টি কমে যাচ্ছে।
এএম/