লালন স্মরণোৎসবে জমজমাট সাধুমেলা
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত লালন স্মরণোৎসবের দ্বিতীয় দিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সদ্যপ্রয়াত সুজেয় শ্যাম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে একে একে শিল্পীরা সুরে সুরে ছড়িয়ে দেন লালনের তত্ত্বকথা।
আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে 'আশাসিন্ধু তীরে' শীর্ষক পর্বের মাধ্যমে সূচনা হয় তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের। উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ।
প্রথম দিন ফকির লালন সাঁইজির তত্ত্ব ও পদ পরিবেশন করেন শিল্পী অরূপ রাহী ও জহুরা ফকিরানী।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর)সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী এক নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করেছি। মহাত্মা লালন সাঁইজি বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবতার কথা বলে গেছেন। বাউল-সাধুদের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা, তারা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। প্রতি বছর লালন স্মরণোৎসব শিল্পকলা আয়োজন করতে চায়। সবাই পাশে থাকবেন।’
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘প্রশ্নের পাশাপাশি ফকির লালন বাহাস করতেন। তিনি ধর্মতত্ত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানবাদীদের সঙ্গে বাহাস করে সমাজে তর্ক করার শিক্ষা দিয়েছেন। এই বাহাস অহিংস। এই বাহাসের শিক্ষা বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা বাংলাদেশের মানুষ জানি, কোনোকিছু বাহাসের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু বাহাস মানেই সহিংসতা নয়।’
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে ফকির লালন সাঁইজির তিরোধান দিবস নতুন তাৎপর্য বহন করে বলে মন্তব্য করেন শিল্পকলার মহাপরিচালক।
জামিল আহমেদ আরও বলেন, ‘তত্ত্ব হল যে কোনো সৃষ্টির মূল খোঁজার পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া। আর লালনের গান মূলত তত্ত্বগান। এমন তত্ত্ব, যা প্রয়োগের সাথে যুক্ত। লালনের দর্শন বস্তুত তত্ত্বদর্শন, যা প্রয়োগের সাথে যুক্ত, সাধনার সাথে যুক্ত। এজন্যই লালন সাঁইজি বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের নতুন পরিকল্পনায় পথ দেখাতে পারেন।’
পরে মঞ্চে এসে বাউল শিল্পীরা সম্মিলিতভাবে গেয়ে শোনান 'এসো হে দয়াল কাণ্ডারী'।
পরে একক কণ্ঠে লালনের বিভিন্ন বাণী গেয়ে শোনান পাগলা বাবলু, মো. মুক্তার হোসেন, শিরিন সুলতানা, টুনটুন ফকির, চন্দনা মজুমদার, শান্তা বাউল, শ্রীকৃষ্ণ গোপাল, রাবেয়া আক্তার, বাউল লতিফ শাহ, রুমা আক্তার, ওমর আলী, আয়নাল হক বাউল, বিল্পব ফকিরানী, বিপ্লব ফকির, আনোয়ার শাহ (রাজবাড়ী), আরিফ বাউল।
শেষ দিনে যা থাকবে:
উৎসবের তৃতীয় দিন শনিবার (১৯ অক্টোবর)বিকাল ৪টায় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ‘জাতিসত্তার প্রশ্ন এবং বাউল-ফকির পরিবেশনার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান হবে।
স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক আ-আল মামুন।
আলোচনা করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, প্রেস ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, নাট্যকার ও গবেষক শাহমান মৈশান। সভাপতি থাকবেন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে দেশবরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে হবে 'ধরো মানুষ রূপ নেহারে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।
প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল। আলোচক থাকবেন সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এসআই/